মুক্তিযুদ্ধ গবেষক;
প্রফেসর বিমল কান্তি দে ;
১৯৭১ সনে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ আধুনিক যুগে ” রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যুদ্ধের মাধ্যমে” স্বাধীনতা অর্জনের এক বিরল দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করা যদিও অদ্যাবধি সম্ভব হয় নি, তথাপি নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের দলিলপত্র নামে যে গ্রন্থাবলি রচিত হয়েছে, তা বহুলাংশে তথ্যসমৃদ্ধ। সবাই জানেন বিপ্লব বা যুদ্ধের মাধ্যমে কোন কর্ম সাধিত হলে তার বিপরীতে কিছু প্রতিবিপ্লব , প্রতিক্রিয়া সংগঠিত হয়।সেটি সংহত বা দমন করা মূল শক্তির পক্ষে একটু কঠিন হয়।
নবগঠিত বাংলাদেশেরপক্ষে তিনটি কাজ করা কঠিন ছিল–
১।মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী গণবাহিনী বা এফ এফ দের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন।
২।যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের আর্থিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন।
৩।রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নব গঠিত জাসদের অসহ যোগিতা+ বৈপরীত্য মোকা বিলা করে সুস্থ রাজনীতির চর্চা প্রতিষ্ঠা করা।
এর সঙ্গে যুক্ত হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা ও দেশে সামরিক শাসন জারি। কিন্তু আমার আজকের প্রসঙ্গ হলো মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিদেশীদের সম্মাননা প্রদান ও সে বিষয়ে বিলম্বের কারণ কী।
পূর্বোক্ত ঘটনার পর জিয়াউর রহমানও এরশাদের আমলে মুক্তিযুদ্ধেরপ্রতিকূলপরিবেশ তৈরি হলো।সুতরাং এরকম কাজের কথা ভাবা হয়নি।
অবশেষে শেখ হাসিনার সরকার প্রতিষ্ঠার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনাকরা হয়। পৃথিবীর সব দেশেই এ প্রথাচালু আছে যে যুদ্ধ কালীন শৌর্য বীর্য প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ রিপোর্ট বিবেচনা করে উপযুক্ত স্তরের সাহসিকতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে সংশ্লিষ্ট কমান্ডারগণ সাহসী মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছেন, পরবর্তী কালে তা বিবেচনা করে ১৯৭২ সনের ১৫ই ডিসেম্বর ৭জনকেবীরশ্রেষ্ঠ,৬৮জনকে বীরোত্তম,১৭৫ জনকে বীর বিক্রম ও ৪৭৪জনকে বীর প্রতীক উপাধি প্রদান করা হয়।এসব উপাধি শুধু মুক্তি যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশ গ্রহণের জন্যই নির্ধারিত ।
কিন্তু বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী ভারত সহ বহির্বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র নায়ক, কূটনীতিক,শিক্ষক, সাংবাদিক,চিত্রশিল্পী,সঙ্গীত শিল্পী সাহিত্যিক,আইনজীবী সমাজকর্মী বহুপ্রকারে সক্রিয় সমর্থন সহযোগিতা করেছেন। বাংলাদেশ সরকার তা সম্যক অবগত আছে এবং তাদের অবদান
কৃতজ্ঞতার সহিত স্মরণ করে। নানাবিধ কারণে যথাকর্তব্য পালনে বিলম্ব হয়। অবশেষে বাংলাদেশ সরকার এই মর্মে একমত হয় যে মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী মিত্রদের প্রতি আনুষ্ঠানিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হবে এবং সম্মাননা প্রদান করা হবে। আলোচনায় এইসিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে মোট
৫০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হবে। প্রায়চৌদ্দমাস ধরে নানাবিধতথ্য বিশ্লেষণের পর প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়।
সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে স্বাধীনতা অর্জনে বাংলা দেশের মুক্তিযুদ্ধকালেবাংলা দেশের পক্ষে অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে
বিদেশীদের জন্য প্রযোজ্য সর্বোচ্চবেসামরিক স্বাধীনতা সম্মাননা প্রদান করা হবে। রাষ্ট্র প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী স্তরের বিদেশীদের অবদানের জন্য “মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা”,অন্যান্য
দের জন্য ” মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী”
সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্বাধীনতার প্রায় ৪০ বছর পর এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন কালে দেখাযায় যে মনোনীত ব্যক্তিদের অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন বলে তাদের মরণোত্তর পদক ও সম্মাননা প্রদান করতেহবে। লক্ষ্যণীয় যে আমেরিকা ও পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও সে দেশের কতিপয় নাগরিক তা সমর্থন করেন।
তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে বাংলাদেশের সরকার তাদের সম্মাননা প্রদান করে।বিদেশি সংবাদ পত্র, রেডিও, টেলিভিশন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। বিবিসি ও আকাশবাণী প্রতি ঘন্টায় সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে বিশ্বখ্যাতি
অর্জন করে। বিবিসির মার্ক টালি ও সংবাদ পরিক্রমার দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় এর কথা সেকালের সবার মনে চিরজাগরূক হয়ে রইবে।
পূর্বোক্ত সম্মাননা ব্যতীত মিত্রদের প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকার আরো তিনটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
১। ইন্দিরা গান্ধী সহ আরো ১০/১৫ জন বিদেশি রাজ
নীতিকের নামে ঢাকায় কয়েকটি রাস্তার নামকরণ
করা।
২। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে
মিত্রবাহিনী হিসেবে ভারতীয় সেনাদের (শহীদসহ) ১৭০০
পরিবারকে সম্মাননা সহ পারিবারিক এককালীন বৃত্তি প্রদান।(প্রথম দফা বৃত্তি
নরেন্দ্র মোদীজীর সমক্ষে
প্রদান করা হয়)
৩ ভারতীয় শহীদ পরিবারের
সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য উপযুক্ত বৃত্তি প্রদান করা হবে।
সম্মাননায় ছিল জাতীয় স্মৃতি সাধের প্রতিকৃতি খচিত, সোনায় মোড়ানো,
রূপার পাতের একটি স্মারক ও সার্কের কাপড়ে মোড়ানো মানপত্র।
এ পর্যন্ত যে কয়টি স্তরে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে
১ম পর্ব–২০১১ সনের ২৫শে
জুলাই– প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী
২য় পর্ব-২০১২ সনের২৭শে মার্চ ।
৩য় পর্ব–২০১২সনের ২১শে অক্টোবর ।
৪র্থ পর্ব–২০১২ সনের ১৬ই ডিসেম্বর ।
৫ম পর্ব–২০১৩ সনের ৪ঠা মার্চ ।
৬ষ্ঠ পর্ব-২০১৩ সনের ২৪শে মার্চ ।
৭ম পর্ব-২০১৩ সনের ২রা অক্টোবর ।
সম্মাননাপ্রাপ্তদের তালিকা অনেক বড়। আমি শতিনেক নাম সংগ্রহ করেছি। সবার নাম লিখতে পারিনা। তবে কিছু নাম প্রতীকী হিসেবে দেওয়া হলো।
————
ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ
প্রণব মুখার্জি
অটল বিহারী বাজপেয়ী
আই কে গুজরাল
সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়
জ্যোতি বসু
নৃপেন চক্রবর্তী ত্রিপুরা
মানিক সরকার ত্রিপুরা
মনসুর আলী ত্রিপুরা
দশরথ দেববর্মণ ত্রিপুরা
মুকুল সাংমা মেঘালয়
পি এন হাকসার
ডি পি ধর
ড ,অশোক রায়
সরদার আবুল মাসুদ
পূর্ণ এ সাংমা
ফিল্ডমার্শাল শ্যাম মানেক শ
লে,জে জগজিৎ সিং অরোরা।
লে ,জে জ্যাকব।
মে জে এস এস উবান
ব্রিগে শান্ত সিং বাবাজী
ব্রিগেডিয়ার বালজিৎ সিং
এম এন আর সামন্ত নেভি
দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
কল্পনা যোশী
কাইফ আজমি
পণ্ডিত রবিশঙ্কর
ওস্তাদ আলী আকবর খান
ভূপেন হাজারিকা
অন্নদা শঙ্কর রায়
গোবিন্দ হালদার
অংশুমান রায়
তরুণ সান্যাল
আবদুল লতিফ ।
——
অভারতীয়
গিরিজা প্রসাদ কৈরালা
এডওয়ার্ড হিথ
সায়মন ড্রিং
মার্ক টালি
পিটার শোর
তাকাশি হায়াকাওয়া
নগুয়েন থি বিন
ফাদার মরিনো রেগান
লার্জ লেইসেনবার্গ
প্রমুখ ।
*অসমাপ্ত।
চিত্র পরিচিতি
মুক্তিযোদ্ধা ডব্লিউ এ এস
অডারল্যান্ড, বীরপ্রতীক