১৯১১ সাল হতে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কালীপুর মধ্যমতরফ জমিদারির তথ্য:
১৯১১ সাল হতে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই ৩৬ বছরের জমিদারির ইতিহাস সম্পূর্ণভাবে জানা যায়নি। উদাহরণস্বরূপ, গিরিজাকান্ত লাহিড়ির চার ছেলের বিয়ে, পুত্রবধূর নাম, তাদের গর্ভে ছেলেদের নাম উত্তরাধিকার হিসেবে বিভিন্ন বই বা গেজেটে উল্লেখ থাকলেও মেয়েদের নাম ও ছেলেদের বিয়ের তথ্য জানা যায়নি।
উইল অনুসারে গিরিজাকান্ত লাহিড়ির বিধবা স্ত্রী ভবসুন্দরী দেবী কালীপুর মধ্যমতরফ জমিদারির ২৬.৬৭ গন্ডা, অর্থাৎ ২৬ গন্ডা, ২ কড়া, ২ ক্রান্তি সম্পত্তির মালিক হন। ভবসুন্দরী দেবীর চার ছেলে থাকা সত্বেও তিনি জমিদারি পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন। ইংরেজি ১৯২৫ সালে ৮১ হাজার টাকার বার্ষিক খাজনার দেনাগ্রস্ত হওয়ায় মধ্যমতরফ জমিদারি কোর্ট অব ওয়ার্ডস (The Court of Wards ) এর আওতায় চলে আসে। কোন জমিদারির উত্তরাধিকারী অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে অথবা ঋণগ্রস্থ হয়ে দেউলিয়া অবস্থায় হলে,… ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে ব্রিটিশ সরকারের নিকট আবেদন করলে তখন সমস্ত জমিদারি কোর্ট অব ওয়ার্ডস দ্বারা পরিচালিত হতো। মধ্যমতরফ জমিদারির দেনা পরিশোধ হয়ে যাওয়ার পর ভবসুন্দরী দেবীর চার ছেলে পৃথক হয়ে প্রত্যেকে জমিদারির ৬ গন্ডা, ১ কড়া, ১ ক্রান্তি সম্পত্তির মালিক হন।
গৌরীপুর পৌর শহরে কালীপুর মধ্যমতরফ জমিদারবাড়ির চারটি হিস্যা:
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পৌর এলাকায় একটি স্থানের নামকরণ হয় কালীপুর মধ্যমতরফ। কালীপুর মধ্যমতরফ জমিদারবাড়ির চারটি হিস্যার তথ্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। গঙ্গাদেবী দুইশত বছর আগে কালীপুর মধ্যমতরফ এলাকায় সাড়ে পাঁচ একর জয়গায় নিয়ে গঙ্গাসাগর নামে একটি বৃহৎ সরোবর বা পদ্মাদিযুক্ত বড় পুকুর খনন করে স্থায়ী নিদর্শন রেখে গিয়েছিলেন। এই গঙ্গাসাগর ঘিরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কালীপুর মধ্যমতরফ জমিদারবাড়ির চারটি হিস্যা। বর্তমানে দু’টি স্থাপনা নিয়ে কালীপুর মধ্যমতরফ জমিদারবাড়ি অবস্থিত। অন্যান্য বাড়িগুলো পাকিস্তান আমলে এবং স্বাধীনতার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। যদিও সেখানকার সবগুলো ভবন একসঙ্গে স্থাপিত হয়নি। মধ্যমতরফ জমিদারবাড়ির বিভিন্ন ভবন পরিবারের বিভিন্ন উত্তরাধিকার বিভিন্ন সময়ে স্থাপিত করেছিল।
কালীপুর মধ্যমতরফ জমিদারবাড়ির চারটি হিস্যার বংশধররা:
কালীপুর মধ্যমতরফ জমিদারির প্রথম হিস্যায় ছিলেন জমিদার গিরিজাকান্ত লাহিড়ির বড় ছেলে প্রমোদাকান্ত লাহিড়ি ও তার পরিবার; ২য় হিস্যায় ছিলেন ২য় ছেলে রমণীকান্ত লাহিড়ি ও তার পরিবার; ৩য় হিস্যায় ছিলেন ৩য় ছেলে তরণীকান্ত লাহিড়ি ও তার পরিবার এবং ৪র্থ হিস্যায় ছিলেন ৪র্থ ছেলে নলিনীকান্ত লাহিড়ি ও তার পরিবার।
ঢাকা গেজেট, ০৭/০২/১৯৫৫ ইং প্রকাশনার এবং
প্রজ্ঞাপন নং ১৫৭৩ (২৫/০১/১৯৫৫ইং), ৫২৫৩ নং তৌজির সূত্র থেকে ইতিহাস ঘেটে রমণীকান্ত লাহিড়ি নামে এক জমিদারের নাম পাওয়া যায়। একই তৌজিতে বাবু ত্রিটির কান্ত লাহিড়ি (ঋতিরকান্ত লাহিড়ি চেীধুরী) সৌদামিনী দেবী চৌধুরাণী, বাবু নীলাদাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী, বাবু প্রিয়দাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরীর নাম উল্লেখ রয়েছে।
অধিগ্রহণের সময় ময়মনসিংহের জমিদারদের বাসস্থানের ঠিকানার তালিকা এবং ময়মনসিংহ কালেক্টরেট রেকর্ডরুমে জমিদাারির ক্ষতিপূরণ তথ্য তালিকার সূত্র থেকে কালীপুর মধ্যমতরফ জমিদারির ২নং হিস্যায় রুহিনীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী, দেবীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী, পিতা-রমনী কান্ত লাহিড়ি চৌধুরী ৪নং হিস্যায় নীহারকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী, পিতা- নালীনীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী, ৩নং হিস্যায় সৌদামিনী দেবী চৌধুরাণী, পতি- তারিণীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী, ১নং হিস্যায় বাবু নীলদাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী পিতা- নীরদা কান্ত লাহিড়ি, বাবু প্রিয়দাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী পিতা- জ্ঞানদাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী, বাবু প্রিতীদাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী পিতা- জ্ঞানদাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী, বাবু প্রানদাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী পিতা- জ্ঞানদাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী নাম উল্লেখ রয়েছে।
(ক) ১নং হিস্যার জমিদার প্রমোদাকান্ত লাহিড়ির দুই ছেলের কৃতিত্ব:
জমিদার প্রমোদাকান্ত লাহিড়ি বাংলা ধ্রুপদ গানের বিশেষভাবে খ্যাতিমান ছিলেন। জমিদার প্রমোদাকান্ত লাহিড়ির দুই ছেলে জ্ঞানদাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী এবং নীরদা কান্ত লাহিড়ি চৌধুরী। ধ্রুপদ গানের সেই উজ্জ্বল উত্তরাধিকারকে জ্ঞানদাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী বিশেষভাবে সংরক্ষণ করেছিলেন। (ইংরেজি ১৯২৩ সালে) ১৩২৯ বঙ্গব্দের ১৩ আশ্বিন তিনি সঙ্গীত সাধনার প্রথম দীক্ষা নেন। তার প্রথম দীক্ষা গুরু ছিলেন ভারতীয় সঙ্গীতের বিশিষ্ট পৃষ্ঠপোষক গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী। তারপর তিনি ভারতের বিখ্যাত সেতার শিল্পী এনায়েত খাঁর কাছে কন্ঠ সঙ্গীত সাধনায় ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি জিতেন্দ্র কিশোর চৌধুরীর কাছে সঙ্গীতে তালিম নিয়েছিলেন। জ্ঞানদাকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী এলাহাবাদ নিখিল ভারত সঙ্গীত-সম্মেলনে ও কলকাতা নিখিল বঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনে সেতার বাজিয়ে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। মাত্র ৪২ বছর ৬ মাস বয়স হওয়ার আগেই বাংলা ৭ ভাদ্র ১৩৪৬ তিনি মারা যান।
এই নীরব সঙ্গীত পূজারী তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন। জ্ঞানদাকান্ত লাহিড়ির কাছে তার ছোট ভাই (অনুজ) নীরদাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরীও সঙ্গীত শিখেছিলেন। বিশেষ করে সেতারে তালিম নিয়েছিলেন। নীরদাকান্ত লাহিড়ি অগ্রজের পাশাপাশি এনায়েত খাঁর কাছ থেকেও সেতারে তালিম নিয়েছিলেন।
নীরদাকান্তের উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে জানা যায়, ‘নীরদাকান্তের জন্ম ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহের কালীপুরে। পিতা ছিলেন জমিদার প্রমদাকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী। তার সঙ্গীত শিক্ষা শুরু হয় অগ্রজ জ্ঞানদাকান্তের কাছে। যিনি ‘বঙ্গীয় ভাতখণ্ডে’ নামে সুপরিচিত ছিলেন। পরে ওস্তাদ এনায়েত খাঁর (১৮৯৪-১৯৩৮) শিষ্যত্ব গ্রহণ করে সেতার বাজনা শেখেন। তিনি ইমদাদখানি শৈলীর বিশিষ্ট ধারক ও বাহক হিসাবে ভারতীয় সঙ্গীত সমাজে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দে এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত সঙ্গীত সম্মেলনে তার সেতারবাদন উচ্চ প্রশংসিত হয়। তিনি আকাশবাণী কলকাতা বেতার কেন্দ্রের একজন নিয়মিত সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। অতি অল্প বয়সে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর নীরদাকান্তের প্রয়াণ ঘটে।’ তার একমাত্র ছেলে নীলদাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় ১নং হিস্যার উভয় পরিবার ভারতে চলে যান।
(খ) ২নং হিস্যার জমিদার রমণীকান্ত লাহিড়ির দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলের কৃতিত্ব:
রমণীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী কালীপুর মধ্যমতরফের ২য় হিস্যার জমিদার ছিলেন। তার দুই ছেলে রুহিনীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী ও দেবীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী। রুহিনীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের বাবা বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্যের বড় বোনকে বিয়ে করেন। রুহিনীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরীর ঔরসজাত সন্তান বা সন্তানদের তথ্য সঠিকভাবে জানা যায়নি। রুহিনীকান্তের ভাই দেবীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। অবিভাক্ত বাংলায় স্কুলজীবনে ইংরেজি ১৯২৩ সালে স্কলারশিপ পেয়ে গৌরীপুর রাজেন্দ্র কিশোর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অনার বোর্ডে তার নাম লেখা রয়েছে।
পরবর্তীতে তার জীবনযাত্রা ও কর্মজীবন সঠিকভাবে জানা যায়নি। তাছাড়া অধিগ্রহণকালে ময়মনসিংহের জমিদারদের বাসস্থানের ঠিকানার তালিকা এবং ময়মনসিংহ কালেক্টরেট রেকর্ডরুমে জমিদাারির ক্ষতিপূরণ তথ্য তালিকার সূত্র থেকে কালীপুর মধ্যমতরফ জমিদারির ২নং হিস্যায় রুহিনীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী, দেবীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী, পিতা- রমনী কান্ত লাহিড়ি চৌধুরী ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ রয়েছে।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় ২নং হিস্যার পরিবার ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলেই বাবু রুহিনীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী চলে আসেন এবং বাংলাদেশেই মৃত্যুবরণ করেন। রুহিনীকান্ত লাহিড়ির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি নিয়ে সরকারের সাথে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। জ্ঞাতি ও উত্তরাধিকার হিসেবে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য রুহিনীকান্তের সিংহভাগ সম্পত্তির অংশ মামলায় জয়লাভ করেন এবং জমি বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেন। তবে এখানে ভাগবাটোয়ারার হিসাব সঠিকভাবে জানা যায়নি।
(গ) ৩নং ও ৪নং হিস্যার জমিদারির জ্ঞাতি-গোষ্ঠীদের তথ্য:
৩য় হিস্যার জমিদার তরণীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরীর ১ম স্ত্রী ছিলেন সরোজিনীদেবী। ১৯১১ সালের পর সৌদামিনী দেবী চৌধুরাণীর কথা জানা যায়। তাছাড়া অধিগ্রহণের সময় ময়মনসিংহের জমিদারদের বাসস্থানের ঠিকানার তালিকা এবং ময়মনসিংহ কালেক্টরেট রেকর্ডরুমে জমিদাারির ক্ষতিপূরণ তথ্য তালিকার সূত্র থেকে কালীপুর মধ্যমতরফ জমিদারির ৩নং হিস্যায় সৌদামিনী দেবী চৌধুরাণী ,পতি- তরণীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ রয়েছে।
এই তথ্য ভিত্তিতে ধারণা করা হয়, সরোজিনীদেবীর মৃত্যুর পর তরণীকান্ত লাহিড়ি ২য় স্ত্রী হিসেবে সৌদামিনী দেবীকে বিয়ে করেন। জমিদার তরণীকান্ত লাহিড়ি পরলোকগমন করেন। উইল অনুসারে তরণীকান্ত লাহিড়ির বিধবা স্ত্রী সৌদামিনী দেবী কালীপুর মধ্যমতরফ জমিদারির ৩য় হিস্যার ৬ গন্ডা, অর্থাৎ ৬ গন্ডা, ১ কড়া, ১ ক্রান্তি সম্পত্তির মালিক হন। এই পরিবারে তরণীকান্ত লাহিড়ির ঔরসজাত সন্তান বা দত্তক সম্পর্কে কোন তথ্য জানা যায়নি।
৪র্থ হিস্যার জমিদার নলিনীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরীর উত্তরাধিকার ছিলেন তার ঔরসজাত সন্তান নীহারকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী। তার জীবনযাত্রা ও কর্মজীবন সঠিকভাবে জানা যায়নি। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় ৩নং ও ৪নং হিস্যার পরিবার ভারতে চলে যান।
গঙ্গাসাগর দীঘি নিয়ে নানান কথাঃ
গঙ্গাসাগর দীঘি নিয়ে নানান কথা:
গৌরীপুরে ব্রাহ্মণ জমিদারি আমলে সবচেয়ে প্রাচীন ও বড় দীঘি গঙ্গাসাগর। কালীপুরের জমিদার হরনাথ চৌধুরীর বিধবা স্ত্রী গঙ্গাদেবী দুই শত বছর আগে কালীপুর মধ্যমতরফ এলাকায় সাড়ে পাঁচ একর জয়গায় নিয়ে গঙ্গাসাগর নামে একটি বৃহৎ সরোবর বা পদ্মাদিযুক্ত বড় পুকুর খনন করে স্থায়ী নিদর্শন রেখে গিয়েছিলেন। তখন কালীপুরে তিনটি তরফ সৃষ্টি হয়নি। ক্রিয়েটিভ এসোসিয়েশন এবং দি ইলেক্টোরাল কমিটি ফর পেন অ্যাফেয়ার্স-এর যৌথ উদ্যোগে মোমেনসিং ও জাফরশাহী পরগনার প্রাচীন নিদর্শন খোঁজার জন্য ২০২০ হতে জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমান প্রজন্ম জমিদারির সঠিক ইতিহাস কেউ জানে না। ২০২৩ সালে গৌরীপুরের ঐতিহাসিক কালীপুর এলাকায় জরিপের সময় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে মধ্যমতরফ জমিদারি বিষয়ে কথা হয়। পুরাতন জেলাখানা মোড়ের বাসিন্দা মোঃ মমতাজ উদ্দিন (৮৫) বলেন, সমগ্র কালীপুর জমিদারির এজমালির সম্পত্তির অংশ গঙ্গাসাগর দীঘি। সরকার ইচ্ছে করলে এই দীঘিটি রক্ষা করতে পারতো। কেননা এটি ঐতিহাসিক এবং জনস্বার্থে মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো একটি অংশ। দুই-তিনজনকে ঐতিহাসিক দীঘিকে ব্যক্তি মালিকানা দিয়ে অনেক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে পুকুরটি ভরাট করে জায়গা বিক্রি করা হচ্ছে। জানা যায়, দীঘির অর্ধেক মালিক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
গৌরীপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ঝিন্টু দেবনাথ বলেন, কালীপুর মধ্যমতরফ জমিদারবাড়ির চারটি হিস্যা রয়েছে। মধ্যমতরফ জমিদারির ২নং হিস্যায় জমিদার রুহিনী বাবু। রুহিনী বাবুর মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি নিয়ে সরকারের সাথে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। জ্ঞাতি ও উত্তরাধিকার হিসেবে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য রুহিনীকান্তের সিংহভাগ সম্পত্তির অংশ মামলায় রায় পান এবং জমি বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। তবে এখানে এজমালি সম্পত্তির ভাগবাটোয়ার হিসেবে আরও তিনটি হিস্যার অধিকার রয়েছে। বাকী তিনটি হিস্যার মালিক সরকার। কেননা ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় ১নং, ৩নং ও ৪নং হিস্যার পরিবার ভারতে চলে যান।
তিনি বলেন, পুকুর ভরাট করে জায়গা বিক্রি করা অনুমতিসাপেক্ষ। ভূমি,পানি, বন, পরিবেশসহ বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের অনুমতি নিয়েছে কিনা ভূমি অফিস অবশ্যই জানবে। গঙ্গাসাগর দীঘির বয়স ২০০ বছরের অধিক তাই, সমগ্র কালীপুর জমিদারির এজমালীর সম্পত্তির অংশে গঙ্গাসাগর দীঘি। খাল, বিল, বড় পুকুর, ভরাট করলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়।