সরকারি নানা বিধিনিষেধ, পুলিশের কড়াকড়ি-কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না ঘরমুখো মানুষকে। দৌলতদিয়া ও শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি বন্ধ করেও আটকানো যায়নি মানুষের ভিড়। রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে চেকপোস্টে কড়াকড়ি আরোপ করায় উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী, অ্যাম্বুলেন্সসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ যানবাহনও আটকে যায়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। বাধ্য হয়েই পুলিশকে কিছু কিছু গাড়ি ছাড়তে হয়েছে। গাড়ির চাপে অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েন দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যরা।
সরকারের দেওয়া ১৪ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে রাজধানীর সবগুলো বের হওয়ার পয়েন্টে পুলিশকে সক্রিয় দেখা গেলেও নানা কৌশলে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। তাদের যৌক্তিক-অযৌক্তিক কারণে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। গাড়ি চলাচল বন্ধে কঠোর ছিল পুলিশের চেকপোস্টগুলো। তারপরও ঘরে ফিরতে ব্যাকুল মানুষ হেঁটে পার হয়ে যান চেকপোস্টগুলো। এরপর পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনে চেপে মানুষের ঢাকা ত্যাগ করার চিত্র ছিল চোখে পড়ার মতো। কোনো বাধাই যেন মানবে না তারা।
গতকাল মঙ্গলবার আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ঈদ উপলক্ষ্যে ছুটি উদ্যাপনের জন্য অনেকেই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন। এটি কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। তবে পুলিশের বাধার কারণে অনেকেই মধ্যরাতে রওনা দিচ্ছেন। কেউ কেউ সেহেরির পর রওনা দিচ্ছেন। ঐ সময় চেকপোস্টে পুলিশ থাকে না। ফলে কোনো বাধায় আটকানো যাচ্ছে না মানুষকে। রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালের কাছে আমিনবাজার ব্রিজে পুলিশ ঢাকা থেকে বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ঢাকা থেকে সাভারে যারা অফিস করার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছেন তারাও আটকা পড়েন। এতে আমিনবাজার ব্রিজ থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেও ঘরমুখী মানুষ দলে দলে পায়ে হেঁটে ঢাকা ছেড়েছেন। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে চেকপোস্ট পেরিয়ে অন্যান্য যানবাহনে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে যান।
মিরপুর দারুস সালাম জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাহমুদা আফরোজ লাকী বলেন, কঠোরভাবে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। শুধুমাত্র পণ্যবাহী ও জরুরি কাজে নিয়োজিত পরিবহনকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। যারা হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তাদেরও ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে অনেকেই চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে অলিগলি দিয়ে চলে যাচ্ছেন।
একই অবস্থা উত্তরা, টঙ্গী ও আব্দুল্লাহপুর সড়কেও। যানবাহন না থাকায় কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে পুলিশের চেকপোস্ট পার হচ্ছে মানুষ। টঙ্গী সেতু দিয়ে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-গাজীপুর যাওয়া আসা করেন। এই পোশাক শ্রমিকদের ভিড়ের মধ্যে গ্রামমুখী মানুষ মিশে গিয়ে টঙ্গী ব্রিজ পার হয়ে ঢাকা ছাড়ছে।
আব্দুল্লাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বপালন করা ঢাকা মহানগর ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপকমিশনার গোবিন্দ চন্দ্র পাল বলেন, ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া কোনো যানবাহনকে আমরা চেকপোস্ট পার হতে দিচ্ছি না। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ ছিল।
শিমুলিয়ায় ফেরি বন্ধ : আমাদের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মানুষের যাতায়াত বন্ধ করতে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারপরও ঘরমুখো মানুষ সকাল থেকে পায়ে হেঁটে বা ভেঙে ভেঙে শিমুলিয়া ঘাটে জড়ো হন। ঘাটে দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৫ হাজার মানুষের ভিড় ছিল। অনেকে স্পিডবোটে পার হয়ে যান। সকালের দিকে যাত্রীরা মাছ ধরার ট্রলারে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় চালকসহ ৩০টি মাছ ধরার ট্রলার ও ২টা সিবোট আটক করা হয়। লৌহজং থানার ওসি আলমগীর হোসাইন জানান, সোমবার মধ্যরাত থেকে বিকল্প পথ হিসেবে লৌহজং-বালিগাঁও-মুক্তারপর সড়কে যাত্রীদের ঢল নামে।
দৌলতদিয়ায়ও একই অবস্থা : আমাদের গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে সকল প্রকার নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও নৌপথে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে ট্রলারে ও সীমিত আকারে দুইটি ফেরিতে নদী পারাপার হচ্ছে যাত্রীরা। দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মুন্নাফ বলেন, যাত্রীরা যাতে ট্রলারে করে যাতায়াত করতে না পারে সে জন্য নদীপাড়সহ ঘাটের বিভিন্ন স্থানে টহলের ব্যবস্থা করেছি।