অবেলা টাপুরটুপুর বৃষ্টি
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ
আষাঢ় মাস মানে চারদিকে বর্ষার থৈথৈ জল আর বেলা অবেলা টাপুরটুপুর বৃষ্টি এবং আকাশে ফটাস ফাটাস বিজলির চমক। কখনো গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আবার কখনো বিরতি হীন বৃষ্টি। সাদা মেঘের ভীড়ে বক ও গাঙচিলের নীড়ে ফেরার তারা আবার ঝড়ো মেঘের ডাকে ডাহুক, শালিকের ওড়াউড়ি আর বোকা কাকের গাছের ডালে বসে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হওয়া। বাড়ির আঙিনায় ছোট ছোট গর্তে জমানো বৃষ্টির পানিতে কিংবা খাল পুকুরের জলে কোলাব্যাঙের ডাক শুনতে কতোই না ভালো লাগতো। আকাশে যখন বিজলি চমকাতো নদীর জলের পুঁটিমাছ, ট্রেংরা, কই, মাগুর উজান বেয়ে ডাঙায় উঠে আসতো। নদী নালা খাল-বিলে কানা কানায় পানি। আবার দেশের কোথাও কোথাও বন্যার কবলে ভাসে সাধারণ মানুষ তবুও যেন দিনরাত অবিরাম ঝরে টাপুরটুপুর বৃষ্টি। অবিরাম বৃষ্টির ফলে মানুষ গুলো ঘরে বন্দী হয়ে পরে কোনো কাজকর্মে যোগদান করতে পারে না তার ফলে গরীব অসহায় মানুষের কষ্ট যেন শেষ হয় না, কারো ঘরে চুলায় আগুন ধরে না কারণ বিরতিহীন বৃষ্টি খাওয়া দাওয়া বেকায়দা পরতে হয় তাদের আর রান্না ই’বা করবে কী করে বাড়ির উঠোনে খোলা জায়গায় তাদের চলা বৃষ্টির জলে ডুবে আছে যে পাতা লতা দিয়ে রান্না করবে তাও ভিজে একাকার কিছুতেই আগুন ধরবে না। তাছাড়া হাটেবাজারে যাওয়া সম্ভব না। মানুষজন ঘরে কষ্টের প্রহর গুনছে কখন বৃষ্টি থেমে রোদের আলো আসবে বাড়ি ঘর শুকাবে উঠোন বাড়ির পেককাদা শুকাবে গাছের শুকনো মর্মর ঝরা পাতা দিয়ে রান্না করবে। আষাঢ় শ্রাবণ বৃষ্টির মৌসুম খরা জমির জন্য বেশ উপকারী পানির অভাবে রোদের তাপে শুকিয়ে যাওয়া ফসল গুলো যেন আবার মোটাতাজা হয়ে উপযুক্ত ফসলে রুপান্তরিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা করে খেটেখুটে খাওয়া দিনমজুর গরীব কৃষক চাষাগন। আবার প্রচুর বৃষ্টির কারণে যখন ফসলি জমি গুলোতে বন্যার কারণে পলি জমে তেমনই বেশ ফসল জন্মায়। জমির উর্বরতা শক্তি ও বৃদ্ধি পায়। বর্ষা মানেই রংধনুর সাত রংয়ে সাজানো আকাশ কখনো মেঘ কখনো রোদ আবার কখনো রোদ বৃষ্টির লীলাখেলা গ্রামের মুরব্বিরা বলে খেঁকশিয়ালির নাকি বিয়ে হয় এই সময়ে। কেটে গেছে কতো শৈশব বৃষ্টিতে ভিজে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের হাসিমুখে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠার কিশোর বেলা। আষাঢ় শ্রাবণে ঘনবৃষ্টির কারণে যখন ফসলির মাঠ পানিতে ডুবে বাড়ির আঙিনায় পানি আসে তখন কাঠের নৌকায় চড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সেই শাপলা ফুল তুলে আর ডুবে ডুবে শালুক কুড়ানোর স্মৃতি আজও মনকে আনন্দ দেয় ইচ্ছে করে আবার যদি সেই কিশোরবেলা ফিরে যেতে পারতাম কতোই না ভালো হতো। পড়ন্ত বিকেলে যখন টিনের চাল বেয়ে বৃষ্টি পড়ে তখন ঘরের জানালা খুলে গ্রীলের ফাঁকে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁইয়ে দেখার আনন্দ আজও মনকে দোলা দেয়। বৃষ্টি এলেই মনে পড়ে কচু পাতা ও কলা পাতা দিয়ে ছাতা বানিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে নানান খেলা মেতে উঠার মূহুর্ত গুলো। আষাঢ় এলো শ্রাবণ এলো পরে দিনরাত বৃষ্টি প্রকৃতিরা আজ অপরূপ সুন্দর সেজেছে দক্ষিণা বাতাসে নড়বড় করে নদীর পাড়ে ছোট ছোট জেলে-মাঝিদের ছোনপাতার চাউনি গুলো, বাড়ির উঠোনের কোণে মা মুরগী টা ডানা মেলে তার ছানাদের আগলে রাখার দৃশ্।