পূর্বধলা (নেত্রকোনা ) প্রতিনিধি:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে’র তফসিল ঘোষনার সাথে সাথে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার সর্বত্র সরগরম হয়ে উঠছে রাজনৈতিক দল ও পরিবেশ। কিভাবে হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন? সংবিধান অনুযায়ী না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন? এই নিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলগুলি রয়েছে অনঢ় অবস্থানে। এরপরেও এখানে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলীয় নেতাদের তৎপড়তা চোখে পড়ার মত। এমন পরিস্থিতে আওয়ামী লীগ চায় আসনটি ধরে রাখতে আর জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চায় আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। ভেতরে ভেতরে তারা সংগঠিত হচ্ছে। যদিও তারা মামলা-হামলার ভয়ে প্রকাশ্যে আসতে পারছে না। তবুও তারা দলকে সুসংগঠিত করে শক্ত অবস্থান তৈরী করছে আসনটি পুনরুদ্ধারে। বলতে গেলে মরিয়া হয়ে কাজ করছে। তারা বলছে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলেই মাঠে নামবে। ফাঁকে ফাঁকে আন্দোলন করছে সেই সাথে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ১৬১, নেত্রকোণা-৫ আসন। এই আসনে ভোটার রয়েছে ২ লক্ষ ৭০ হাজার ৬৯৯জন। এই আসনে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় দেড় ডজন নেতা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিতে জনসভা, কর্মীসভা, উঠান বৈঠক, গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতীক। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে টানা তিনবার এই আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। পাশাপাশি ২০০৩ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শুরুর দিকে এই সংসদ সদস্য অনেকটা দাপটের সহিত বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও বর্তমানে অসুস্থতা জনিত কারনে তার কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়ে গেছে। তবে তার অনুসারীরা আশা করছেন, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে রাজনৈতিক মাঠে স্ব-মহিমায় ফিরবেন। সংসদ সদস্যের অনুপস্থিতিতে তার বড় ভাই জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা ড. আনোয়ার হোসেন মাঝে মধ্যে এলাকায় এসে জনসংযোগ চালাচ্ছেন। ড. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি এ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হতে পারেন। পূর্বধলার আওয়ামী রাজনীতিতে বহুল আলোচিত নাম কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, বীরমুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা সফল এই রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের টানা পাঁচ বারের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ক্লিনইমেজের অধিকারী আহমদ হোসেন জাতীয় রাজনীতিতে বিভিন্নভাবে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখলেও দলীয় মনোনয়ন আজও তার ভাগ্যে জোটেনি। ফলে হেভিওয়েট এই প্রার্থীর সংসদ সদস্য হওয়ার সাধ বারবারই অপূর্ণই রয়ে গেছে। প্রতিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়নের দৌঁড়ে তার নাম আগে থাকলেও শেষ পর্যন্ত না পাওয়ায় হতাশ হতে হয়েছে তার অনুসারীদের। তবে এবারের প্রেক্ষাপটকে ভিন্নভাবে দেখছেন তার অনুসারীরা। তারা বলছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহধন্য, বিশ্বস্থ ও আস্থাভাজন হিসেবে এবারের নির্বাচনে আহমদ হোসেনই মনোনয়ন পাবেন। সেই লক্ষ্যে আহমদ হোসেনও উপজেলায় ব্যাপক গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। পূর্বধলায় আওয়ামী রাজনীতিতে আর এক সফল রাজনীতিকের নাম জাহিদুল ইসলাম সুজন। তিনি দলীয় মনোনয়নে একাধারে টানা দুই মেয়াদের উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পূর্বধলা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। দলীয় কার্যক্রমে তৃণমুল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত ও সুসংগঠিত করার কাজে তিনি অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে নেতা কর্মীদের সাথে তার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। তিনি নৌকার টিকিট পেতে দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় দলীয় নানা কর্মসুচী পালনের মাধ্যমে নেতা কর্মীদের উজ্জীবিত করে রাখছেন। তোলে ধরছেন সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কার্যক্রম। তার অনুসারীদের দাবী আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করার জন্য এই আসনে তিনি একজন যোগ্য প্রার্থী।
আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় আরও যারা কাজ করছেন তাদের একজন হলেন ঢাকা মহানগর উত্তর কৃষক লীগের সহ সভাপতি মাজহারুল ইসলাম সোহেল। নবীনদের মধ্যে তিনিও দলীয় টিকেট পাওয়ার আসায় প্রতিনিয়ত প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের প্রার্থীতার জানান দিতে নিয়মিতই করে যাচ্ছেন ছোট বড় সমাবেশ ও সমাজসেবা মুলক কাজ। আরও যারা আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কাজ করে যাচ্ছেন তারা হলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক জিএস ইঞ্জিনিয়ার মিছবাহুজ্জামান চন্দন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার তুহিন আহাম্মদ খান। এছাড়া একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে “তারা ফাউন্ডেশনে’র” চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ড. নাদিয়া বিনতে আমিন (সিআইপি) দলীয় মনোনয়নের আশায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে চারজন নেতা কাজ করে যাচ্ছেন। বতর্মানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে কেন্দ্রীয় কর্মসুচীর অংশ হিসেবে অবরোধ, হরতাল পালন করতে গিয়ে অনেকটা ব্যাকফুটে আছেন দলের নেতা কর্মীরা। এরপরেও নির্বাচনী প্রস্তুতিতে তারা মোটেও পিছিয়ে নেই। আওয়ামীলীগের অধিক প্রার্থীতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দলীয় নমিনেশন যেই পাক তার পক্ষেই তারা বিজয় চিনিয়ে আনতে চায়। এই আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বিগত নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবু তাহের তালুকদার এবারও দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। সাবেক সাংসদ মরহুম ডা: মোহাম্মদ আলীর সহধর্মীনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ রাবেয়া আলী ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব বাবুল আলম তালুকদার মনোনয়নের আশায় কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া নেত্রকোণা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি এ.এস.এম শহীদুল্লাহ ইমরানও এই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। জাতীয় পার্টী থেকে উপজেলা জাতীয় পার্টীর সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান তালুকদার আজাদ দলীয় টিকিটের জন্য দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে যাচ্ছেন। এর আগে ৯ম ও ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মনোনয়ন পেলেও পরে দলীয় প্রধানের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়ে ছিলেন বলে তিনি জানান। অপর প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টীর সাংগঠনিক সম্পাদক কেরামত আলী এই আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আসায় কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেত্রকোণা জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারী ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক মাসুম মোস্তফা এবং জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে নেত্রকোনা জেলা কমিটির সভাপতি এম.আর মাসুম নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়নের আশায় কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া তৃনমূল বিএনপি,সিপিবি ও সতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আসতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।