(শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র চাঁদরায় ও বেগম রানীর সঙ্গে এক রাজকীয় প্রেম কাহিনী)
মোমেনসিং ও জাফরশাহী পরগানার জায়গীরদার, গৌরীপুরের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদারদের প্রতিষ্ঠাতা এবং বগুড়ার আদমদিঘীর কড়ই রাজবাড়ির প্রসিদ্ধ জমিদার শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র চাঁদরায় ও এক বিদ্রোহী মুসলিম জমিদারের স্ত্রী বেগম রানীর সঙ্গে এক রাজকীয় প্রেম কাহিনী নিয়ে নানা জনে নানা ধরণের মজার মজার গল্প, গান, ইতিহাস ও কেচ্ছা বা কিস্সা রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র চাঁদরায় সর্ববিষয়ে পিতার উপযুক্ত পুত্র ছিলেন। তিনি পিতার নিকট মুর্শিদাবাদে থেকেই বিদ্যা শিক্ষা গ্রহণ করেন। প্রথমত চাঁদরায় চন্দ্রকিশোর তলাপাত্র নামে পরিচিত ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের পিতা,পিতামহ সকলেই নবাব সরকারে চাকরী করে বিশেষ প্রতিপত্তি লাভ করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণও পিতৃ পথানুসরণ করে নবাব দরবারে পরিচিত ও প্রতিপন্ন হবার উদ্দেশ্যে পারস্য ভাষা শিক্ষা লাভ করে প্রথম যৌবনে তিনি স্বীয় বিষয় সম্পত্তির তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং মুর্শিদাবাদে গমন করাই স্থির করলেন। পরবর্তীতে নবাব সরকারে তার জ্যেষ্ঠ ছেলে চাঁদ রায় প্রথমে জনাব রায় রায়ান আলম চাঁদ এর সহকারী সচিব হিসেবে চাকুরি নেন ।
# রাজস্ব সচিব হিসেবে চাদঁরায়ের ক্ষমতাঃ
তৎকালীন নবাব আলীবর্দী খাঁ এর দরবারের খালসা বিভাগের প্রধান কর্মচারী চাঁদ রায় চৌধুরী।পরবর্তীতে নবাব রাজ দরবারে শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে চাঁদ রায় প্রথমে জনাব রায় রায়ান আলম চাঁদ এর সহকারী সচিব হিসেবে চাকুরি নেন এবং পরবর্তীতে নবাবের প্রিয় পাত্র হিসেবে জনাব আলম চাঁদের মৃত্যুর পর ‘রায় রায়ান’ উপাধিসহ খালসা বিভাগের রাজস্ব বিষয়ক সচিবের পদে প্রাপ্ত হন। শ্রীকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠ সন্তান বলে তিনি বড়ই সুপুরুষ নির্ভীক ও অসাধারণ বলবান ছিলেন। নবাব যুগে অশ্বারোহণে, তীর তরবারি পরিচালনা প্রভৃতি বীরত্বপূর্ণ কার্যে ইতিহাসে প্রসিদ্ধি লাভ করেন ।
# চাঁদরায়ের উদ্যোগে শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর জাফরশাহী পরগণা লাভঃ
সেসময়ে জামালপুর জেলার জাফরশাহী পরগণার অবস্থা ভাল ছিল না। রাজস্বও অতি কম। শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীকে ঐ পরগণার দায়িত্ব প্রদান করলে জাফরশাহীর বিশেষ উন্নতি হবে এবং মোমেনসিং পরগণার রাজস্ব অক্ষুণ্ণ থাকবে, জানালেন জমিদারের পুত্র চাঁদরায় । এই পরামর্শই যুক্তিযুক্ত বলে গ্রহণ করলেন নবাব আলীবর্দী খাঁ। চাঁদরায় পূর্ব হতেই সরকারের বিশেষ অনুগৃহীত। ইতিপূর্বে ঘোড়াঘাটে একটি বিদ্রোহ দমন করে নবাব আলিবর্দী খাঁর প্রিয় পাত্র হয়েছিলেন। চাঁদরায়ের চেষ্টা ও উদ্যোগে জাফরশাহী পরগণা মোমেনসিং পরগণার সাথে অন্তর্ভুক্ত করেন । মোমেনসিং পরগণার জন্য যে রাজস্ব নির্ধারিত ছিল, পরবর্তীতে মোমেনসিং পরগণা ও জাফরসাহী পরগণা মিলে উভয় পরগণার জন্য ঐ রাজস্বই নির্দিষ্ট হলো। এক পরগণার রাজস্ব দিয়ে তিনি দুইটি সুবৃহৎ পরগণা ভোগ করবার অধিকার প্রাপ্ত হলেন।
# নবাব আলিবর্দৗ খাঁ হিন্দু কর্মচারীগণের প্রতি বিশ্বাসঃ
নবাব আলিবর্দী খাঁ হিন্দুদিগের প্রতি বড়ই অনুকূল ছিলেন। তিনি হিন্দুকে বিশ্বাস করতেন। হিন্দুর ধর্মশাস্ত্রে শ্রদ্ধাবান ছিলেন, হিন্দুর্নীতি অনুসরণ করতেন। মুসলমান অপেক্ষা হিন্দু কর্মচারীদিগকে অধিক বিশ্বাস করতেন। নবাব আলিবর্দী খাঁ প্রায় ৬৫ বৎসর বয়সে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত থেকেছিলেন। এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি সর্বদা যুদ্ধ কাজে নিযুক্ত থাকতেন এবং থাকে তাকে স্থানে স্থানে ভ্রমণ করতে হোত। যে অল্প সময় রাজধানীতে থাকতেন, তাও যুদ্ধের উদ্যোগ আয়োজনেই সর্বদা ব্যস্ত থাকতেন। রাজ্যের আভ্যন্তরীণ অবস্থা পর্যবেক্ষণের সময় ও সুবিধা সহজেই পাওয়া যেত না। জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র্র কিশোর রায়চৌধুরীর ১৯১১ সালে প্রকাশিত ‘ময়মনসিংহের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদার’ গ্রন্থ থেকে তার কিছু উদ্ধৃতি দেওয়া হলো – ” রায়রায়ান চাঁদরায়ই সর্বেসর্বা হইয়া রাজ্যের সর্ব বিষয়ে কর্তৃত্ব করিতেন। এরূপ প্রগাঢ় বিশ্বাস কাহার ভাগ্যে ঘটিয়াছে? এরূপ বিশ্বাসের সদ্ব্যবহার কতজন করিতে পারিয়াছে? ”
# নবাবের হুকুমে চাঁদরায় কর্তৃক ঘোড়াঘাট চাকলায় এক বিদ্রোহী মুসলিম জমিদারের শিরঃচ্ছেদ এবং তার স্ত্রী বেগম রানীর সঙ্গে এক রাজকীয় প্রেম কাহিনীঃ
ব্রাহ্মণ যুবরাজ রায়রায়ান চাঁদরায় সম্বন্ধে অনেক গল্প কবিতা প্রচলন আছে। ঘোড়াঘাট চাকলায় কোনও দুর্দান্ত মুসলমান জমিদারের শাসনের জন্য এবং তাকে যুদ্ধে পরাজিত করার জন্য নবাব আলিবর্দী খাঁ তার বিশ্বাসত্ব কর্মকর্তা চাঁদরায়কে প্রেরণ করেন। বুদ্ধিমান চাঁদরায় হত্যাকাণ্ডের যুদ্ধ বা লোকক্ষয়কর যুদ্ধের অনুষ্ঠান অপেক্ষা কৌশলে কার্যসিদ্ধি করতে সঙ্গত বোধ করেন এবং নবাবের কতকগুলি উন্নতমানের অশ্ব নিয়ে অশ্ব ব্যবসায়ীরূপে উক্ত জমিদারের রাজ্যে উপস্থিত হন। কিছুদিন সেখানে বাস করতে করতে দীন দরিদ্রকে বহু অর্থ দান দক্ষিণা করেন। অনেক গরীব লোকদের অভাব মোচন করেন এবং জমিদারের কর্মচারীগণকে অর্থে ও সৌজন্যে বশীভূত করেন। এমন সওদাগরের অপরূপ রূপ, অপূর্ব দানশক্তি ও অর্থের প্রচুরতা দেখে স্থানীয় লোকজন তাকে কোন ছদ্মবেশী রাজপুত্র বলে মনে করতেন। তার পৃষ্ঠপোষক লোকের অভাব ছিল না। পর্যাক্রমে এই খবর জমিদারের অন্তঃপুরে পৌছল। রাজার পত্নী বেগম রানী তাকে দেখতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কোনও উপায়ে অন্তঃপুরে তিনি সামনে হাজির হলে রানী স্তম্ভিত হলেন এবং তার রূপ-লাবণ্যে. মোহিত হলেন। যেমন রহস্যময় এক রাজপুত্র, তেমনি রহস্যময় তার প্রেম। রানীও ছিলেন পরমাসুন্দরী হিসেবে সেসময়ের ট্রয় নগরের হেলেন বা ক্লিওপেট্রার মত এক রহস্যময়ী নারী। তখন চাঁদরায় তার লক্ষ্য ও সুবিধা অন্বেষণ করতে লাগলেন। বেগম রানীর হাবভাব বুঝে তার প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করতে লাগলেন। তাদের প্রেম গভীর হওয়ার পর রূপে পাগল বেগম রানী ব্রাহ্মণ রাজপুত্র চাঁদরায়ের প্রতি এতই অনুগত হলেন যে, তার নিজ স্বামীর জীবন নাশের প্রস্তাবে সম্মতা হলেন। চাঁদরায় রানীর কৌশলে গুপ্তভাবে অন্দরমহলে প্রবেশ করেন এবং নিদ্রিত অবস্থায় জমিদারকে হত্যা করে রাজপ্রাসাদ থেকে বাহিরে যাবার সময় বেগম সাহেবা জিজ্ঞাসা করেন, “মেরা ওয়াস্তে কৌন হ্যায়”। চাঁদরায় উত্তর করেন, “তোমরা ওয়াস্তে হাম হ্যায়।” বেগম রানী ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে এই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা বলে চাঁদরায়কে নিরাপদে অন্দরমহল থেকে বাহির করতে সাহায্য করেন। পরদিন চাঁদরায় সৈন্যসামন্ত সহ রাজবাড়ি বেষ্টন করেন, কিন্তু জমিদারের মৃত্যুতে পরিবারবর্গ শোকার্ত ও শঙ্কিত হয়েছিল বলে সহজেই চাঁদরায়ের বশ্যতা স্বীকার করেন। বেগম রানীর সঙ্গে যে প্রেম ঘটনা ঘটেছিল, তা রক্ষার জন্য তিনি তার রক্ষণাবেক্ষণের ভার গ্রহণ করেন। তারপর চাঁদরায় নিহত জমিদারের মুণ্ডটি নবাব দরবারে আনয়ন করেন। নবাব আলিবর্দী খাঁ চাঁদরায়ের কাজের প্রতি খুশি হয়ে উপযুক্ত পুরস্কার প্রদান করলেন। তখনকার থেকেই মুসলমান জমিদারের পত্নী বেগম রানী এবং ব্রাহ্মণ রাজপুত্র চাঁদরায়কে নিয়ে গল্প-কবিতা-উপন্যাসের পাশাপাশি নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন গান ও গীত।
# সামাজিক কারণে চাঁদরায় বেগম রানীকে বিয়ে ও রক্ষণাবেক্ষণ করা অস্বীকার এবং রাণী রাগণ্বিত হয়ে চাঁদরায়ের একমাত্র ছেলে সোনারায়কে কড়ই গ্রাম হতে বন্দি করে নিয়ে আসাঃ
আমরা সকলেই জানি কোন এক সময় কোন রাজা বা যুবরাজ অন্য কোন রাজ্য দখল করলে সে রাজ্যের পরাজিত রাজার স্ত্রীকে বিয়ে করতেন। যেমন রাজা ইডিপাস। প্রবাদ প্রবচন আছে যে, বিধির লিখন যায় না খন্ডন।ভাগ্যে লেখা থাকলে দুর্ভোগ পোহাতে হবেই। নিয়তি যেভাবে মানুষকে নিয়ে খেলবে, মানুষ সেভাবেই খেলবে। মানুষ হলো পুতুল। যুবরাজা চাঁদরায়ের সোনা তলাপাত্র (সোনা রায়) নামে এক পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সন্তানের গর্ভধারিণী মা মৃত্যু বরণ করেন ।এখানেই চাঁদরায়ের জীবনে ট্র্যাজেডি নিহিত। প্রসূতি সময়ে যুবরাজ চাঁদরায়ের পত্নীর অকাল মৃত্যু, বেগম রানীর প্রতি অনুরাগ, ধর্মের প্রতি সংবেদনশীল, বিভিন্ন সামাজিক চাপ ইত্যাদি কারণে তিনি তার নিজের মনকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। এমনকি তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে রাজি হননি। কিছুদিন সময় অতিবাহিত হলে চাঁদরায় উক্ত বেগমের বিয়ে ও রক্ষণাবেক্ষণের ভার বহন করতে অস্বীকার করেন। বেগম রানী চাঁদরায়ের ব্যবহারের খুব রাগান্বিত হলেন এবং চাঁদরায়ের প্রতি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মনস্থ করলেন। জীবনযন্ত্রণায় সূর্যের মতোই তেজ রানীর। চাঁদরায় মুর্শিদাবাদ নবাব প্রাসাদ থাকে রাজকার্য করেন অতএব সেখানে তাকে প্রতিশোধ নেওয়া দুরূহ ব্যাপার। এভাবে দিন পেরোতে পেরোতে সোনা রায় ১৬ বছরে পরিপূর্ণ হল। বিবাহযোগ্য ছেলে হওয়ার আগেই বেগম রানী কোন উপায় না দেখে চাঁদরায়ের পুত্র সোনারায়কে ধরে আনার জন্য বগুড়ার কড়ই রাজ্যে গুপ্তভাবে কয়েকজন অস্ত্রধারী সৈন্য প্রেরণ করেন। অবশেষে রাজপ্রাসাদ থেকে সোনারায় কোন উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় । এই সুযোগে সৈন্যগণ সোনারায়কে রাস্তা হতে ধরে বেগম রানীর কাছে আনেন। বেগম রানী সোনারায়কে বন্দি করে কোন এক নিরাপদ স্থানে অতি সাবধানতার সঙ্গে রক্ষা করেন এবং তার রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ে করাতে স্থির করেন। মুসলিম দিনপুঞ্জি ও চাঁদ উঠার তারিখ অনুসারে বিবাহের দিন ধার্য হল। রাজপুত্র সোনারায় নানারূপ আপত্তি দেখিয়ে ক্রমে কিছুদিন অতিবাহিত করলেন। কোন একদিন এক প্রহরীকে নিজের স্বর্ণ অঙ্গুরীয় উৎকোচ স্বরূপ প্রদান করে অব্যাহতি লাভ করেন। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার নামকরণ করা হয় শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর অতি আদরের প্রথম পৌত্র (নাতি) সোনা তলাপাত্র বা সোনারায় এর নাম অনুসারে। তাছাড়াও জমিদার শৌরীন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর সময়ে রাজকন্যার সঙ্গে সোনারায়ের বিবাহ সম্বন্ধে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন স্থানে গ্রাম্য-গাথা প্রচলিত ছিল। এই অমর গাথা প্রতি বৎসর পৌষ সংক্রান্তির পূর্বে বগুড়া ও রাজশাহী অঞ্চলে গীত হয়ে কাহিনীর প্রচলন ছিল। নিম্নে সেই গাথাটি প্রদত্ত করা হল। যথা—
লাল লাল সেহঁড়া মাথে
পাটের পরণ নিয়া সাথে
ওলো বেগম সাহেব
কি কর বসিয়া।
তোমার বেটির দামান্দ আ’ল
দোলায় সাজিয়া।
মালী ভাই চাঁপ ফুল
দিয়াছে আনিয়া।
আবার চলিল মালিয়ান
ফুল আনিবার।
দুই ডালা ভরে ফুল
আনিল সোলার।
সেও ফুলে হল নারে
বিয়া সোনারার
ফের চলিল মালিয়ান
ফুলের লাগিয়া।
আনিল গেন্দার ফুল
ডালায় সাজিয়া।
সেও ফুলে হল নারে
সোনারা’র বিয়া।
বার বার যায় মালিয়ান
ফুলের লাগিয়া।
কোন চাঁদে হল নারে
সোনারা’র বিয়া।
চাঁদরায় চাঁদরায় কি কর বসিয়া
তোমার পুত্র মাইর খায় সেখানে বসিয়া।
# বেগম রানীর প্রতি শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর ক্রোধ এবং সোনারায় জন্মের সময়ে স্ত্রীর মৃত্যুর পর চাঁদরায়ের দ্বিতীয় বার বিবাহ করতে অসম্মতির কারণ ও প্রবাদঃ
আদরের পৌত্র (নাতি) সোনারায় মুক্তিলাভ করে কড়ই রাজবাড়িতে পৌঁছলে বৃদ্ধ শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী বেগম রানীর প্রতি খুব রাগান্বিত হলেন এবং অবিলম্বে তার প্রতিশোধ লইতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেন। কিন্তু বেগম রানীর এই ঘটনার কিছুদিন পর অন্য কোথাও যাওয়াতে শ্রীকৃষ্ণের ক্রোধ কমতে কমতে বিলীন হয়ে গেল। চাঁদরায়ের একটি মাত্র পুত্র সোনারায় জন্ম হওয়ার পর তার পত্নী মৃত্যবরণ করেন, তারপর তিনি আর বিবাহ করেন নাই। শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী বিবাহের জন্য অনুরোধ করলে তিনি বলেছিলেন, “আপনার ছয় পুত্র। যদি আমি বিবাহ করে বংশ বৃদ্ধি করি, তবে ভবিষ্যতে আপনার সম্পত্তি খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যাবে। আমার একমাত্র পুত্র সোনারায় বর্তমান আছে, তারপরে বিবাহ করা কি দরকার ?” রামগোপালপুর জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র্রকিশোর রায়চৌধুরীর ১৯১১ সালে প্রকাশিত ‘ময়মনসিংহের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদার’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘‘পত্নী-বিয়োগকালে চাঁদরায়ের বয়স অধিক হয় নাই। বিদ্যা, বুদ্ধি, শক্তি, পদমর্যাদা, সর্ব বিষয়েই তিনি ভাগ্যবান ছিলেন। এমন রূপবান, গুণবান পুরুষ এত অল্প বয়সে পত্নীহারা হইয়া বিবাহ করিতে অনিচ্ছুক, অবশ্যই ইহার মধ্যে কোনও কারণ আছে। কল্পনার শত শাখা শত পথে চলিল। শেষে সিদ্ধান্ত হইল, চাঁদরায় উক্ত মুসলমান দুর্দান্ত জমিদারকে হত্যা করার সময় অবশ্যই বেগমের প্রণয়ে মোহিত হইয়াছিলেন, নচেৎ বিবাহে অমত হইবার আর কারণ কি আছে? অলীক কল্পনা এইরূপ ক্ষীণ ভিত্তির উপরই প্রতিষ্ঠা লাভ করে।”
# বৃদ্ধ পিতা শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর আদেশ ও অনুরোধে চাঁদরায় মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করে বগুড়ার কড়ই রাজপ্রাসাদে আগমনঃ
শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী জমিদারি প্রাপ্তির পর হতে শাসন ও বন্দোবস্ত কাজে লিপ্ত ছিলেন। জমিদারি কাজের বেশী পরিশ্রমে তার স্বাস্থ্যভঙ্গ হল। তিনি জীবনের শেষ ধাপ অর্থাৎ বার্ধক্যে পৌঁছেয়াছেন। বিভিন্ন পরগনার বিপদসঙ্কুল পথ পেরিয়ে তার পক্ষে জমিদারি কাজ করা সম্ভব নয়। কোন কর্মচারী দ্বারা এই সব জমিদারি কার্য করা তখনও সম্ভব ছিল না। তাই তিনি জ্যেষ্ঠ পুত্র চাঁদরায়কে জমিদারির তত্ত্বাবধান করতে আহ্বান করলেন। চাঁদরায় পিতার আদেশে প্রথমে বগুড়ার কড়ই রাজ বাড়িতে উপস্থিত হন।
# মোমেনসিং পরগনায় প্রজাবিদ্রোহ দমনের জন্য প্রথমে বোকাইনগর বাসাবাড়িতে আগমন এবং নেত্রকোণার নন্দীপুর গ্রামে চাঁদরায়ের নতুন বাসস্থান নির্মাণঃ
শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র চাঁদ রায় চৌধুরী নেত্রকোণার মদনপুর ও বেকৈরহাটির নিকট নন্দীপুর গ্রামে কাছারি বাড়ি নির্মাণ করেন। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগরে অবস্থিত বাসাবাড়ি শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর মোমেনসিং পরগানার প্রধান কাননগু অফিস ও কাছারি রাজবাড়ি ছিল। চাঁদ রায় বৃদ্ধ পিতার অদেশানুসারে বগুড়ার আদমদিঘি উপজেলায় অবস্থিত শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর কড়ই রাজবাড়ি নামক বাসস্থান হতে গৌরীপুরের বোকাইনগর বাসাবাড়ি অভিমূখে যাত্রা করেন। পরবর্তীতে মোমেনসিং পরগনার মধ্যস্থলে জমিদারি কার্য পরিচালনা এবং প্রজাবিদ্রোহ দমনের জন্য বর্তমান গৌরীপুর উপজেলার সীমানায় ঘেষা নেত্রকোণার মদনপুর সংলগ্ন নন্দীপুর গ্রামে বাসস্থান নির্মাণের এক মাত্র উদ্দেশ্য ছিল। মোমেনসিং পরগনার প্রজাবিদ্রোহ সে সময়ে একইভাবে ছিল। দত্ত ও নন্দীদের বশীভূত ও অনুগত প্রজাগণ সর্বতোভাবে শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর শাসন বহির্ভূত ছিল। সিন্ধা পরগণার মুসলমান জমিদারও পূর্ব বিদ্বেষ তখনও ত্যাগ করেননি। সে সময়ে তিনি এ বিদ্রোহের দমনের জন্য বদ্ধপরিকর হলেন। রামগোপালপুর জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র্রকিশোর রায়চৌধুরীর ১৯১১ সালে প্রকাশিত ‘ময়মনসিংহের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদার’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘‘চাঁদরায় পিতার আদেশানুসারে বাসাবাড়ি অভিমুখে যাত্রা করিলেন। বাসাবাড়িতে থাকিয়া কার্য করা সুবিধাজনক মনে করিলেন না। বিশেষত অধিকৃত স্থানের মধ্যস্থলে বাস না করিলে সর্ব দিকে সমান দৃষ্টি রাখার ব্যাঘাত ঘটিবে। এই জন্য তিনি প্রসিদ্ধ মদনপুরের নিকট নন্দীপুর নামক স্থানে উপস্থিত হন। মদনপুরে তখন বহু সম্ভ্রান্ত মুসলমানের বাসস্থান ছিল। মদন নামক একজন কোচবংশীয় ব্যক্তির নামানুসারে এই স্থানের নাম মদনপুর হইয়াছে। চাঁদরায় মদনপুরের উন্নত অবস্থা দেখিয়া তাহার সন্নিকটে স্বীয় কাছারি বাড়ি স্থাপন করিলেন। তিনি নন্দীপুর গ্রামবাসী দুর্গারাম ও তুলারামদের বাটিতে বাস করিয়া স্বীয় কাছারি বাড়ি নির্মাণ করেন। অচিরেই নন্দীপুরের মাঠে প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড বাসগৃহ, সৈন্যাবাস প্রভৃতি নির্মিত হইল। ”
# চাঁদরায়ের বিদ্রোহ দমন, শান্তি ও বন্দোবস্তঃ
ইতিহাসে দেখা যায় সে সময়ে বিভিন্ন পন্থীর শক্তিদের বা বাহুবলেরই প্রাধান্য ও মর্যাদা ছিল। প্রবল বা ক্ষমতাশালী ব্যক্তি দুর্বলের উপর অত্যাচার করলে প্রায়ই তার সুবিচার হতো না। “যার লাঠি তার মাটি” এই কথা সেই সময়েই রচিত হয়েছিল। তখন চাঁদরায় অনেক জনবল সংগ্রহ করে প্রবল বেগে বিদ্রোহী দমনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেন। বগুড়ার কড়ই ও জামালপুরের জাফরশাহী পরগনা হতে নিয়ে আসা অধিকাংশ লাঠিয়াল বাহিনী আহত হল। অচিরেই বিদ্রোহ পতনের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছায়। বিদ্রোহীগণ দলবদ্ধ হয়ে আত্মরক্ষা করবার পূর্বেই অনেকের গৃহ ধ্বংস হয়ে গেল, শস্যাগার আগুনে পুড়ে গেল, বাসগৃহ লুণ্ঠিত হইল। মাঠের শস্য লাঠিয়াল ও সিপাহীদের পদতলে ক্ষতি হল। যারা দলবদ্ধ হয়ে বাধা দিল তাদের মধ্যে অনেকেই হতাহত হল। বিদ্রোহী প্রজাগণের দমন দেখে অনেকে সাবধান হল, কেহ তাদের সাহায্য করল না, কেহ তাদেরকে আশ্রয় দিল না। তাদের দুঃখ দুর্দশায় কেও সহানুভূতি প্রকাশ করতে সাহস পেল না। যাদের উসকানিতে নির্বোধ প্রজাগণ জমিদারের বিরুদ্ধে উদ্যত হয়েছিল, এই দুঃসময়ে তারাও আত্মগোপন করল। প্রজাগণের হাহাকারে সে অঞ্চল ভরে গেল। সহায় নাই, সম্পদ নাই, খাদ্য নাই, মাথা রাখবার স্থান নাই, চোখের সামনে সর্বনাশ হল, স্ত্রী পুত্র লয়ে নিঃস্ব হয়ে ভিখারি হল; তাদের রক্ষাকর্তা কেও নাই। প্রজাগণ অনুতাপে শোকে, দুঃখে ব্যাকুল হয়ে উঠল। অনেক বিদ্রোহীগণকে গ্রেপ্তার করে নন্দীপুরের কারাগারে বন্দি হল। বহু লোক দেশ ত্যাগ করল। দত্ত ও নন্দী বংশীয়েরা ও সিন্ধার জমিদারও ভয় পাইলেন, আত্মরক্ষার জন্য চাঁদরায়ের নিকট পত্র লিখলেন। তার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করবার জন্য দলে দলে লোক আসতে লাগল। অল্পদিনের মধ্যেই বিদ্রোহের বীজ পর্যন্ত লুপ্ত হল। শান্তির মৃদু বাতাসে দেশ স্নিগ্ধ হল। বিদ্রোহ দমনের পরেই চাঁদরায় বন্দোবস্তের কাজ আরম্ভ করেন। রাজস্ব বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা ও পারদর্শিতার তুলনা ছিল না। অতি সহজে অল্পদিনের মধ্যেই জমিজমা প্রভৃতির পরিমাণ স্থির হয়ে গেল। বাকি কর ও বিদ্রোহ দমনের ব্যয় স্বরূপ বহু টাকা সংগৃহীত হল। তার প্রতাপে খাজনার প্রচুর উন্নতি সাধিত হল।
# নেত্রকোণার মদনপুর ও বেকৈরহাটির নিকট নন্দীপুর গ্রামে চাঁদরায়ের চব্বিশ বিঘা দিঘী এখনও ইতিহাসের সাক্ষীঃ
শত বছর আগে রামগোপালপুরের জমিদার শৌরীন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর লেখা প্রমাণ করে যে, নন্দীপুরে গড়ে উঠা প্রাচীন কাচারি বাড়িটি অতীত গৌরবের নিদর্শন। নন্দীপুরের বিবরণ সম্বন্ধে তার কিছু উদ্ধৃতি দেওয়া হলো “চাঁদরায় নন্দীপুরে অতি বিস্তৃত স্থান ব্যাপিয়া যে কাছারি বাটি নির্মাণ করিয়াছিলেন, তাহার ভগ্নাবশেষ এখনও পূর্ব প্রতাপের ও অতীত গৌরবের নিদর্শন-স্বরূপ বর্তমান আছে। একটি সুবৃহৎ দীর্ঘিকা আছে, তাহার আয়তন প্রায় চব্বিশ বিঘা। সে স্থানে যে ধনাগার ছিল তাহার কিয়দংশ এখনও অবিকৃত আছে। একটি শিবমন্দির তাহার ধর্মশীলতার পরিচয় দিতেছে। কাল-চক্রের নিষ্পেষণে চাঁদরায়ের কীর্তিকলাপ অতীতের ধূলি-কণায় মিশিয়াছে, কিন্তু লোক সমাজে তিনি যে দক্ষতা, প্রতিভা ও প্রতাপের পরিচয় দিয়া গিয়াছেন, যতদিন গুণের আদর থাকিবে, যতদিন নিঃস্বার্থ প্রভুপরায়ণতার প্রতিষ্ঠা থাকিবে, ততদিন তাহার গৌরব-মণ্ডিত-গুণ-গাথা ইতিহাস পৃষ্ঠায় সুবর্ণ অক্ষরে চির সমুজ্জ্বল থাকিবে।”
বর্তমান (২০২২) তৎকালীন নবাব আলীবর্দী খাঁ এর আমলে রণনায়ক চাঁদ রায় কর্তৃক প্রায় চব্বিশ বিঘা (৭৯০ শতাংশ) আয়তনের সুবিশাল দিঘীটি আছে। দিঘীর পাড়সহ ৪০টি বাড়ির জন্য গুচ্ছ গ্রামের সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করেন বাংলাদেশ সরকার। এখনও রণনায়ক চাঁদ রায় কর্তৃক চব্বিশ বিঘা দিঘীটি অতীত গৌরবের নিদর্শন স্বরূপে বিশেয গুরুত্বপূর্ণ । গুচ্ছ গ্রামের নন্দীপুর আদর্শ গ্রাম বহুমখী সমিতি লিঃ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মো. রইছ মিয়া বলেন, দিঘীর পাড়সহ এখানে ৬ একর ৬৯ শতাংশ ভূমি রয়েছে তাদের সমিতির জন্য। পুকুরের পানি রয়েছে ৫০০ শতাংশের মধ্যে। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী তিনি শুধু জানেন পুকুরটি ছিল গৌরীপুরের জমিদারবাড়ির অধীনে।
# নন্দীপুর গ্রামে চাঁদরায়ের দাসীবাড়ির ধ্বংশাবশেষ ও পুকুর এখনও স্মৃতির স্মারকঃ
নন্দীপুর গ্রামে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শন দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম দাসীবাড়ির ধ্বংশাবশেষ অন্যতম। প্রায় ২৮০ বছর আগে নির্মাণ করা দাসীবাড়ির ধ্বংশাবশেষ এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর পাশেই রয়েছে ইতিহাস বিজড়িত একটি দীঘি। যার নাম ‘দাসীবাড়ির দীঘি’। প্রায় শত বছর ধরে অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে থাকা ঐতিহাসিক এ দু’টি নিদর্শন হতে পারতো নন্দীপুরের সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন কেন্দ্র। চাঁদরায়ের সময়ে এই দাসীবাড়িতেই আনন্দ-কোলাহলে মুখরিত থাকতো। চাঁদরায়ের অবসর সময়ে তাকে সেবা দেওয়ার জন্য সুন্দর সুন্দর দাসীদের সমারোহে নাচ, গান, আমোদ-প্রমোদ ও বিভিন্ন ভোজ সেবা হতো।
# সোনারায় ও রণনায়ক চাদঁরায়ের মৃত্যুঃ
সে সময় চাঁদরায় গৌরবের উচ্চ সিংহাসনে রসিয়া নন্দীপুর বাসভবনকে উজ্জ্বল করিতেছিলেন, সেই সময় এক দারুণ দুর্ঘটনা ঘটিল। তাহার একমাত্র পুত্র সোনারায় শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরির নিকট করৈর বাটিতে বাস করিতেন। ঐ বালক অতীব রূপবান এবং সুলক্ষণাক্রান্ত ছিলেন। ঐ বালক প্রসূত হইবার পরেই তাহার গর্ভধারিণী পরলোকগতা হন। মাতৃহীন বালক
বড়ই যত্নে বড়ই আদরে পিতামহের নিকট বর্ধিত হইতেছিলেন। এই সময় উক্ত সোনারায় ষোড়শ বর্ষ বয়সে অকস্মাৎ বিসূচিকা রোগাক্রান্ত হইয়া অকালে প্রাণত্যাগ করেন। যথা সময়ে এই দুঃসংবাদ চাঁদরায়ের কর্ণগোচর হইল। এই দারুণ বজ্রপাতে তাহার অস্থি পঞ্জর চূর্ণ হইয়া গেল। যাহার মুখ চাহিয়া তিনি পত্নী বিয়োগ-দুঃখ সহিয়াছিলেন, এ পর্যন্ত দ্বিতীয়
দ্বার-পরিগ্রহ করেন নাই। সেই জীবন সর্বস্ব অন্তিমের একমাত্র সম্বল পুত্র রত্নে বঞ্চিত হইয়া চাঁদরায় স্তম্ভিত হইয়া পড়িলেন। তাহার চক্ষে অশ্রু ঝরিল না, আর্তনাদ উঠিল না, কেবল অস্থি-চর্ম ভেদ করিয়া দীর্ঘ নিশ্বাস বহিতে লাগিল। পুত্র শোকের সহিত পত্নী শোক নববেশ ধরিয়া দেখা দিল। শোকের দারুণ আবর্তে পড়িয়া তাহার কর্মময় জীবন ঘোর অবসাদ এবং নিরুৎসাহের গাঢ় অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন হইল। আর আশা উৎসাহ কিছুই রহিল না। স্বভাবসিদ্ধ ধৈর্যগুণে আত্ম-সংযমের চেষ্টা করিলেন বটে কিন্তু শান্তি, সুখ, আসক্তি কিছুই রহিল না। ইহার কিছুকাল পর চাঁদরায় ১৭৫৩ কিংবা ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে পিতৃ বর্তমানেই স্বর্গধামে গমন করেন।
চাঁদ রায় চৌধুরী গৌরীপুরের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদারদের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর সর্ব বিষয়ে পিতার উপযুক্ত পুত্র ছিলেন। বিদ্যা, বুদ্ধি, শক্তি, পদমর্যদা, সর্ব বিযয়েই তিনি ভাগ্যবান ছিলেন। এমন রূপবান, গুনবান পুরুষ দেখে রণনায়ক অনেক নারী প্রণয়ে মোহিত হতেন। উপযুক্ত পুত্রের কারণে শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী জামালপুর জেলায় জাফরশাহী পরগানা অর্জন করেন। এই দুই পরগনা মিলে সাড়ে ৫ লক্ষ একর জমি ছিল। সেসময়ে তিনি ছিলেন ময়মনসিংহের বড় জমিদার। পরবর্তী জমিদার যুগল কিশোর রায় চৌধুরীর আমলে মোমেনসিং পরগানার নাম থেকেই বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা নামকরণ করা হয়। চাঁদ রায় চৌধুরীর বিস্তারিত ইতিহাস “পেন অ্যাওয়ার্ড অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিন-২০২৩” ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হবে।