অনলাইন ডেক্স:
এক সময় ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী। বোমা বানাতে গিয়ে হাত দুটি হারিয়ে এখন তিনি হাজি এবং বনে গেছেন আন্তর্জাতিক ভিক্ষুক। ভিক্ষা করতে একাধিকবার সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ভারতে গেছেন। হজ করার উদ্দেশ্যে নয়, হাজী ভিসায় প্রায় বছরই তিনি সৌদি আরব যান। এভাবে ভিক্ষাবৃত্তি করে কোটিপতি হয়েছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মতিয়ার রহমান ওরফে মন্টু।
হজের নামে সৌদি আরব গিয়ে এবারও ভিক্ষা করার সময় মদিনা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন মন্টু। এমন ঘটনা দেশের জন্য খুবই লজ্জার উল্লেখ করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখার উপসচিব আবুল কাশেম মুহাাম্মদ শাহীন জানান, স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। দেশে ফেরৎ এলে তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
জানা যায়, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সিন্দুরকোটা গ্রামের ভাটপাড়ার বাসিন্দা মতিয়ার রহমান (৪৮)। গ্রামে সবাই তাকে বোমা মন্টু বলে চিনে। একসময় ডাকাত দলের নেতা ছিলেন। তখন বোমা বানাতে গিয়ে বোমার বিস্ফোরণে দুই হাতের কব্জি কাটা পড়ে। তখন ডাকাতি ছেড়ে দিয়ে বিদেশে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেন। ২০ বছর আগে মন্টু সবার কাছে দুধর্ষ হলেও এখন আশপাশের মানুষের কাছে ভালো মানুষ। তার বংশের আগের এরকম
কোন ইতিহাস নাই বলে গ্রামবাসী জানায়।
গ্রামের ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন জানান, মন্টু অনেকবার হজ ভিসায় সৌদি গিয়েছে। তবে গ্রামে কখনো তাকে মসজিদে নামাজ পড়তে দেখিনি। গ্রামের চাদোকানি হোসেন খন্দকার জানান, কম খরচে ভারত হয়ে হজে যাওয়া সহজ হওয়ায় বেশ কয়েকবার মন্টু হজে গিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে দেশে ফেরে। আর সেই অর্থে গড়েছে সহায় সম্পদ ও মাঠান জমি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, একবার হজে গিয়ে ভিক্ষা করে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা আয় হয়েছিল মন্টুর। তারপর থেকে হজের নামে সৌদি গিয়ে ভিক্ষা করেন। মূলত হজ করতে নয়, সেখানে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিই তার নেশা ও পেশা।
ডাকাত থেকে এখন আন্তজার্তিক ভিক্ষুক বনে গেছেন মন্টু। দুই হাতের কব্জি হারিয়ে অভিনব এই কাজ করে গ্রামে প্রায় ২০ বিঘা জমির মালিক হয়েছেন। গবাদিপশু পালন করে এবং চাাষাবাদসহ ব্যবসা রয়েছে। সবমিলিয়ে গ্রামের ডাকাত মন্টু এখন তাদের কাছে কোটিপতি মন্টু। করোনার কারণে এবং সীমান্ত বন্ধ থাকায় দুই বছর হজে যাওয়া হয়নি বলে এবার দেশ থেকে ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিস নামের এক হজ এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি গিয়ে এবারই প্রথম মদিনা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।
বুধবার বিকেলে মদিনায় ভিক্ষা করার সময় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে বাংলাদেশ হজ মিশনের একজন কর্মী গিয়ে মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেন। এ ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার দায়ে ধানসিঁড়ি ট্রাভেলসকে ধর্ম মন্ত্রণালয় হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী শোকজ করেছে। হজের
নামে হাজী ভিসায় সৌদি গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির ঘটনায় বিব্রত ও লজ্জিত সরকারের হজ মিশন, স্থানীয় প্রশাসন এবং এলাকাবাসী।
অভিযুক্ত মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মমতাজ পারভীন জানান- এক ছেলে, তিন মেয়ে, শাশুড়ি নিয়ে সংসার তার। দুই হাত না থাকলেও তার স্বামী নিজের সব কাজ নিজেই করতে পারেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার স্বামী মতিয়ারের সাথে তার মোবাইলে কথা হয়েছে। বলেছে ভালো আছি, হজ শেষে চলে আসবো। ওইদিনের পর থেকে মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। করোনায় সীমান্তপথ বন্ধ না হলে ভারতে তিনি প্রায়ই যান। ভারত এবং বাংলাদেশ হয়ে অনেকবার হজের উদ্দেশ্যে সৌদি গেছেন। এভাবে অর্থ আয় করে সহায় সম্পদ গড়েছেন। তবে বিদেশে গিয়ে কি করে তা জানি না।
মতিয়ার রহমানের বড় ভাই আতিয়ার রহমান বলেন, মন্টু এ নিয়ে চার বার হজে গেছে। ওখানে যেয়ে কি করে তা আমরা কি করে বলব। সে আটক হওয়ার পর খবর পেয়েছি আমরা। সবাই এখন সমালোচনা করছে এটা আমাদের খারাপ লাগছে।
গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ জানান, ভিক্ষা করতে গিয়ে মন্টু সৌদি পুলিশের হাতে ধরা পড়লে
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বিষয়টি আমি জানতে পারি।
গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক জানান, মতিয়ার রহমানের নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মারামারি ও হাঙ্গমার অভিযোগে থানায় দুটি মামলা আছে। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেফতারও হয়েছিল এবং জেল খেটেছেন।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম জানান, এক ব্যাতিক্রমী ও নিন্দানীয় কাণ্ড ঘটিয়ে গাংনী উপজেলার সিন্দুরকোটা গ্রামের মতিয়ার রহমান মন্টু দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। তার ঘটনা হাজীদের সাথে যাওয়া সরকারের প্রতিনিধিদলকে বিব্রত করেছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে মন্টু সম্পর্কে তদন্ত শুরু করেছি। যেহেতু হজ ভিসায় গেছে, তাই হজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে দেশে ফেরৎ আনা সম্ভব না। তবে দেশে এলে তার বিরুদ্ধে আইনগত সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা হাজী সমিতির সভাপতি জেলা পরিষদের প্রশাসক হাজী গোলাম রসুল জানান, টাকা থাকলেই মানুষ হজে যাওয়ার সুযোগ পায় না। অথচ হজের নামে সেখানে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করা হাজীদের জন্য খুবই লজ্জার ও নিন্দার। এমন দুয়েকজনের অপকর্মের কারণে ভবিষ্যতে হজ ভিসা প্রাপ্তি জটিল হয়ে গেলে সেটাও দুঃখজনক হবে। তাই হাবকে এই বিষয়ে আরও সর্তক হতে হবে।