নিজস্ব প্রতিবেদক;
বছর পাঁচেক আগেও আর্জেন্টিনা ছিল আঁধারের কানাগলিতে ঘুরপাক খেতে থাকা এক দলের নাম। সেই দলটাতেই এখন তীব্র আলোর ঝলমলানি। ৩৩ ম্যাচ ধরে অপরাজিত, শেষ এক বছরে জিতেছে কোপা আমেরিকা আর ফিনালিসিমা শিরোপা। দলের এমন পারফর্ম্যান্সের সবচেয়ে বড় কারণ খেলোয়াড়দের দলের প্রতি নিবেদন আর ঐক্য। যার বড় কৃতিত্ব দলকে এক সুতোয় গাথা কোচ লিওনেল স্ক্যালোনির। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেটাই জানালেন মিডফিল্ডার রদ্রিগো ডি পল। জানালেন, স্ক্যালোনি বললে আর্জেন্টিনার দিনটাও নাকি রাত হয়ে যায়!
স্ক্যালোনির অধীনে আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন ডি পল। তাই আলবিসেলেস্তে শিবিরে স্ক্যালোনি যুগটাও সবচেয়ে বেশি দেখেছেন তিনিই। দলের এমন বদলে যাওয়ার রহস্য তো তারই সবচেয়ে বেশি জানার কথা। সেটা তিনি জানেন। সম্প্রতি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম টেলি ফে’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাকি সবাইকেও জানালেন সেটা।
আর্জেন্টিনার এমন টিম স্পিরিটটা তৈরি হয়ে গিয়েছিল একেবারে স্ক্যালোনি যুগের শুরু থেকেই। ২০১৮ বিশ্বকাপের পর সাময়িক বিরতি নিয়েছিলেন মেসি। তা শেষে তিনি যখন দলে ফিরলেন, তখন তা বেড়ে গেল আরও। ডি পল বললেন, ‘প্রথম মুহূর্ত থেকেই আমাদের ভেতর একটা ভালো লাগা কাজ করছিল। আমি আগে থেকেই তার গুণমুগ্ধ ছিলাম, তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর, ব্যক্তিগতভাবে তাকে চেনার পর থেকে তা বেড়ে গেছে আরও।’
আকাশী-সাদাদের এক সুতোয় গাথার পেছনে একটা পানীয়েরও হাত আছে। বার্সেলোনায় শেষ কয়েক বছরে দেখা যেত, লিওনেল মেসি যেখানেই যেতেন, হাতে থাকতো একটা ছোট্ট পানীয়ের কৌটা। লাতিন আমেরিকার বিখ্যাত মাটে চা থাকত তাতে। তার সেই মাটে চা-প্রীতি ছড়িয়ে গেছে আর্জেন্টিনাতেও।
ডি পল বললেন, ‘পাপু, (গোমেজ) আমি আর মেসি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি আমরা। এরপর আমরা একসঙ্গে মাটে চা খাই।’ এ তো গেল খাওয়ার কথা, বানানোর ক্ষেত্রে দলে ভালো কে আছেন? ডি পল জানালেন, ‘জিও (লো চেলসো) খুব ভালো বানায়, নিকো অটামেন্ডিও। বেঁটে (মেসি) উন্নতি করেছে অনেক। সে অলস ছিল না, তবে এসব বানাতে সে ক্লান্ত বোধ করতো, তাই আগে সে এটা নিয়ে চেষ্টা করেনি।’
‘একদিন পাপুকে সঙ্গে নিয়ে আমি তাকে বলেছিলাম এটা বানাও। সে তখন রেগে গিয়েছিল। এরপর সে দারুণ উন্নতি করল। বানানোর নিয়ম রপ্ত করল, কীভাবে পানি ঢালতে হয় তা শিখল। সে বেশ উন্নতি করেছে।’
তারা ছাড়াও এই চা পান করেন আর্জেন্টিনা দলের আরও অনেকে। ডি পল জানালেন, ‘কেউ কেউ অনুশীলনের দিনে মাটে খায়। কেউ আবার খেলার দিন। যেমন ধরুন খেলার দিন শুরুটা করে পাপু।’ এই চা-সংস্কৃতি দারুণ এক বন্ধনেই বেধেছে আলবিসেলেস্তেদের।
তবে এই বন্ধন, ঐক্যের পেছনে কোচ স্ক্যালোনির হাতটাই সবচেয়ে বেশি। শেষ চার বছরে যেভাবে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, নানা যোজন-বিয়োজনের পর দলকে এভাবে গড়ে তুলেছেন বিশ্বকাপের জন্য, তা সত্যিই চোখে পড়ার মতো।
আর্জেন্টিনা দলের খেলোয়াড়রাও বেতাজ বাদশাহরূপেই জ্ঞান করেন স্ক্যালোনিকে। সেটা কেমন? ডি পল জানালেন, ‘এখন ধরুন সকাল ১০টা বাজে। এমন সময়ে স্ক্যালোনি এসে আমাদের বললো শুভরাত্রি, তখনই আমাদের জন্য রাত হয়ে যায়।’
এমন টিম স্পিরিট ফলও দিচ্ছে আর্জেন্টিনাকে। ৩৩ ম্যাচ অপরাজিত, দুটো শিরোপাজয় তো আর এমনি এমনি হয়নি! আর মাস পাঁচেক পর শুরু বিশ্বকাপ। দলের এমন বন্ধন সেখানেও ফল দিক, আর্জেন্টিনা তো চাইবে সেটাই!