নিজস্ব প্রতিবেদক;
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রকাশিত তৃতীয় গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ হয়েছে। এতে মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়নি বলে অভিযোগে তুলেছেন নিয়োগ প্রত্যাশীরা। এ অভিযোগে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কাছে দুই শতাধিক লিখিত আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে।
চলমান বিধিনিষেধের পর পুরোদমে অফিস চালু হলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সুপারিশ বঞ্চিত নিয়োগপ্রত্যাশীরা।১৪তম ব্যাচের কৃষি শিক্ষায় নিবন্ধনধারী খুলনার তহমিনা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘সম্মিলিত মেধা তালিকায় আমার মেধাক্রম ৩৪০ এবং সিরিয়াল ৪০৪। আমি সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য আবেদন করে একটিতেও সুপারিশপ্রাপ্ত হইনি। কিন্তু আমার ৩ নং পছন্দের প্রতিষ্ঠান (খুলনার) কেকেআর হাই স্কুলে যিনি সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন, তার মেধাক্রম ৪৩৯ এবং সিরিয়াল ৫১৭।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া আদর্শ গার্লস হাইস্কুলে যিনি সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন, তার মেধাক্রম ৪৩৯ এবং সিরিয়াল ৫৭০। যেখানে নিয়ম অনুযায়ী দুটি প্রতিষ্ঠানে আমার সুপারিশ পাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি।’একই অভিযোগ ১২তম ব্যাচে ইংরেজি বিষয়ে নিবন্ধনধারী নিখিল চন্দ্র গোলদারেরও। তিনি বলেন, ‘সম্মিলিত মেধাতালিকায় আমার মেধাক্রম ৩০৮৩ এবং সিরিয়াল ৩৩৯৫। আমি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার শশীকর উচ্চ বিদ্যালয়ে আবেদন করে নিয়োগ পাইনি। কিন্তু যে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন, তার মেধাক্রম ৪৬৬৫ এবং সিরিয়াল ৬০৪৪।’
বাগেরহাটের মোসা. আজমিরা খাতুনেরও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘আমি ১৫তম ব্যাচের ব্যবসায় শিক্ষায় একজন নিবন্ধনধারী। মোট আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছি। এই আটটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনোটিতে মেধাক্রম অনুসরণ করা হয়নি।’আজমিরা বলেন, ‘আমার মেধাক্রম ৩৭১। আমার প্রথম পছন্দ (বাগেরহাটের) বরনি সাইরাবাদ এমএল হাই স্কুলে যিনি নিয়োগ পেয়েছেন তার মেধাক্রম ২৩৪০। এ ছাড়া আমার আবেদন করা অন্য সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাক্রম অনুসরণ করা হয়নি। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের মেধাক্রম যথাক্রমে ২৩৪০, ৯৫৫, ২৩৪০, ১৫১৪, ৭০১, ২৩৪০ ও ১৫১৪।’
১৪তম ব্যাচের ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের নিবন্ধনধারী টাঙ্গাইলের সাইফুল ইসলাম জানান তিনিও মোট আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন। তার অভিযোগ, আটটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনোটিতেই মেধাক্রম অনুসরণ করা হয়নি।সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মেধাক্রম ৩৫৩৩ ও সিরিয়াল ৩৮১৬। কিন্তু আমার আবেদন করা প্রথম পছন্দ (টাঙ্গাইলের) লতিফপুর একতা উচ্চ বিদ্যালয়ে যিনি নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন, তার মেধাক্রম ৪৯৭৬। আর বাকি সাতটিতেও যারা নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন, তাদের মেধাক্রম যথাক্রমে ৪৩১৮, ৪৭২৯, ৪৭২৯, ৪৭২৯, ৪০০৯, ৪২৯৯ ও ৪৩১৮।’
সুপারিশবঞ্চিত এসব নিয়োগপ্রত্যাশীরা ফল পুনর্বিবেচনা করে আবার নির্ভুলভাবে প্রকাশের আবেদন জানান।এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র সচিব ড. এ টি এম মাহবুব-উল করিম বলেন, ‘এনটিআরসিএ’র তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশের পর বেশ কিছু অভিযোগ প্রার্থীরা করছেন। সেই অভিযোগগুলোর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়কে লিখিত আকারে তথ্যপ্রমাণসহ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে অভিযোগগুলো সত্য নয়। প্রার্থীরা ফল প্রকাশের সঠিক প্রক্রিয়া না জেনেই অভিযোগ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি এনটিআরসিএ’র নিয়োগ প্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছ। এরপরও যারা অভিযোগ করছেন, তাদের কাছে আমার অনুরোধ লকডাউন শেষে অভিযোগগুলো এনটিআরসিএতে জমা দিন অথবা মেইল করুন। আমরা অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করব এবং সত্যতা পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। কেন তারা নিয়োগের সুপারিশ পাননি, সে বিষয়টিও তাকে জানিয়ে দেব।’ তথ্যসূত্রঃ জাগো নিউজ