মুক্তিযোদ্ধা গবেষক, প্রফেসর বিমলকান্তি দে;ময়মনসিংহ
একথা বহুজনবিদিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ শৌর্যবীর্য প্রদর্শনের জন্য সরকার চার স্তরের গ্যালান্ট্রি অ্যওয়ার্ড বা বীরপদক ঘোষণা করে।।
মানের নিম্নক্রমানুসারে সেগুলি হচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ ৭ জন, বীরউত্তম ৬৮ জন, বী্রবিক্রম ১৭৫ জন ও বীরপ্রতীক ৪২৬ জন মোট ৬৭৬ জন। এদের নামতালিকা পরিচয় ও খেতাব নিয়ে ১৫/১২/৭৩ তারিখে একটি গেজেট প্রকাশিত হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে পদক হস্তান্তর করা হতে থাকে।
আমি মুক্তিযুদ্ধের ১১ নং সেক্টর নিয়ে কাজ করি। এখানে গণবাহিনীভুক্ত ৯ জন যোদ্ধা বীরবিক্রম উপাধি পেয়েছেন।প্রথম গেজেট অনুযায়ী এদের মাত্র এক জনের বাদে অন্য কারো পূর্ণ ঠিকানা নেই। বীরপ্রতীক বিভাগে ক্রমিক ৩৯০ থেকে ৪২৬ পর্যন্ত ২১ জনের ঠিকানা ও পিতার নাম নেই।একজনের শুধু পারিবারিক উপাধিি আছে, নামও নেই। এমন অবস্থয় এদের সনাক্ত করবো কি করে?১৯৮৭ সনে কাজ করতে গিয়ে অামি এই সমস্যার সম্মুখীন হই।মুক্তিযোদ্ধার কল্যাণ ট্রাস্টে গিয়ে বার বার শুনেছি আমরা তাদের ঠিকানা জনি না।
১৯৮৭ সন নাগাদ আমি বীরপ্রতীক তারামন বেগমসহ ৭/৮ জন বীরপ্রতীকের ঠিকানা অনুসন্ধানে ব্রতী হই। গেজেটে দেখলাম লেখা আছে গণবাহিনীভুক্ত বীর প্রতীক ক্রমিক নং ৩৯৬ মোসাম্মৎ তারামন বেগম, পতি মেসের আলী ঠিকানা নেই। তদবস্থায় ৭/৮ বছর চেষ্টা করে ১৯৯৫ সনে আমি তারামনের সন্ধান পাই। একই সময়ে পদক বঞ্চিত বসির্মিআহদের কথা দেশবাসীকে জানাই।
তারামনের প্রসঙ্গটিি আমি আলাদা বলবো। ১৯৯৬ সন পর্যন্ত আমার প্রয়াস যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। পরে অনুসন্ধান কর্মে বিরতি এসে যায়।শেষ জীবনের অালো অামার দিকে আঙুল দিয়ে কিছু বলছে। অাঠার বছর কেটে গেল। তবু আশা গেল না। তখনো অনেকখেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ঠিকানাহীন রয়ে গেছেন। আমি আট-দশবার মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে চিঠি লিখেছি।
জবাবে তারা বলেছেন- এখনো অনেক খেতাবপ্রাপ্তের ঠিকাানা তাদের জানা নেই অর্থাৎ তারা নিরুদ্দিষ্ট। ২০১২ সনে একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথাা” নামে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তি যোদ্ধাদেরজীবনীসহ একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হয় এবং ময়মনসিংহে তাদের সম্মানে সংবর্ধনা হয়। তাতে লেখা আছে তখন পর্যন্ত মোট ৫৫ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা নিরুদ্দিষ্ট রয়েছেন। সেই নিরুদ্দিষ্টদের তালিকায় দেবদাস বিশ্বাস বীরপ্রতীক রয়েছেন। তিনি ৯ নং সেক্টরের লোক।তাকে আমি পূর্বে তিন বছর খুঁজে ব্যর্থ হয়েছি।
আমি আবার দেবদাসের সন্ধানে ব্রতী হলাম এবং এক বছরের বেশী সময় পর জানতে পেলাম তিনি ভারতে আছেন। অনেক সন্ধানের পর তাঁকে খঁজে পাই,যোগাযোগ করি, দেখা করি, এবং তাকে বীরপ্রতীক সনদ ও পদক প্রদানের জন্য অনুরোধ জানিয়ে দেশের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত তথ্যসহ আবেদন জানাই। কিন্তু অদ্যাবধি অগ্রগতি দেখি না। সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতিই আমার শ্রদ্ধাবোধ আছে।
এদের মধ্য যারা খেতাবপ্রাপ্ত, তাদের একটা বিরাট অংশ স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও নিরুদ্দিষ্ট রয়ে যাবেন একথা ভেবে কষ্ট পাই। কেননা তাদের কাছে আমরা স্বাধীনতার ঋণে ঋণী।