মোঃ এমদাদুল ইসলাম,
আমাদের প্রজন্ম ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে, সঠিক দিক-নির্দেশনা দেবে, পরিচালনা করবে সারা বিশ্ব। যে প্রজন্ম হারিয়ে গেছে সে প্রজন্মকে কতটুকু অনুসরণ করেছে বা বর্তমান প্রজন্ম কতটুকু চিন্তা করছে ডিজিটাল যুগে সেটাই ভাবনার ভাবনার বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে। স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চালুর মাধ্যমে আমাদের শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ পর্যন্ত চালাতে শিখে গেছে। আর ঠিক তখনই বেরিয়ে আসছে প্রকৃত প্রতিক্রিয়া। বয়স ভেদে চালিয়ে যাচ্ছে স্মার্টফোন।
গল্প-গুজব, আলাপচারিতা, খেলাধুলা, নাওয়া-খাওয়া পড়াশোনা সবকিছুই হারিয়ে সবার উপরে স্থান করে নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। স্মার্টফোনের মাধ্যমে সব কয়টি অপশনে বয়স ভেদে কাজ করছে তো করছেই। মান্যতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, শিষ্টাচার সবকিছুই ভুলতে বসেছে আমাদের প্রজন্ম।
শিশুর ভালো লাগছে স্মার্টফোনের গেম। কিশোরের ভালো লাগছে গেইম, যুবকের ভালো লাগছে নগ্ন ছবি আবার ইউটিউব এর মাধ্যমে বয়স উপযোগী দৃশ্যপট ।আবার কারো ভাল লাগছে ফেসবুকে লেখালেখি। সবাই ব্যস্ততার মধ্যে সময় পার করছে ভালোলাগার ডিজিটাল বিশ্বকে। বিপাকে পড়েছে পিতা-মাতা, অভিভাবক মহল ।একটা স্মার্টফোন চাই, নেট চাই, নেটের গতি চাই, কোন কারণে ঘাটতি দেখা দিলে প্রতিক্রিয়া বড়ই ভয়াবহ। কখনো সুইসাইডের হুমকি, ঘর ভাঙ্গা, মোবাইল ভাঙ্গা, অনৈতিকভাবে চলে বলে স্মার্টফোন চাই ।
বাস্তবতা হচ্ছে সমাজের নানা ভাবে আইন-শৃঙ্খলাসহ সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা সবদিক থেকেই প্রজন্মের মধ্যে চরম অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাচ্চারা তাদের মোবাইল ফোন বা ট্যাবলেট নিয়ে খুব বেশি সময় কাটাচ্ছে।শিশু-কিশোরদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কুফল নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক। প্রজন্ম আজ কল্পনার জগতে বাস করছে। এতে তাদের শারীরিক স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে।অভিভাবকদের জন্য পরিস্থিতি দিন দিন খুব কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। এমন দেখা দিয়েছে অনেক অভিভাবক ওয়াইফাই রাটার নিজেদের সাথে নিয়ে ঘুমান -যাতে বাচ্চারা মাঝরাতে উঠে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারে।
বিশেষজ্ঞরা দাবী করছেন সোশ্যাল মিডিয়ার কারনে কিশোরকিশোরীদের মানসিক সমস্যা তৈরি করছে। দেখা যায়, স্ন্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রাম তাদের মনে সবচেয়ে বেশি হীনমন্যতা এবং দুশ্চিন্তাা সৃষ্টি করে। ১০ জনের মধ্যে ৭ জন বলেছে ইনস্টাগ্রামের কারণে তাদের নিজেদের দেহ নিয়ে মন খারাপ হয়েছে। ১৪ থেকে ১৪ বছর বয়সের তরুণতরুণীদের অর্ধেকই বেশী ফেসবুকের কারণে তাদের মানসিক দুশ্চিন্তা ও অশান্তি বেড়ে গেছে।
এখন সময় এসেছে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।সবার ব্যবহারের জন্য নীতিমালা তৈরি করা এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে আনা। এছাড়া সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতা সৃষ্টির কলা-কৌশল ঠিক করে একটা পর্যায়ে আনা। অন্যথায় প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে নিমজ্জিত হতে বাধ্য।
প্রাথমিক পর্যায়ে যে ইতিবাচক ভাবনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে যে কেউ ইন্টারনেটের মাধ্যমে অবারিত জ্ঞানের সাগর থেকে তাদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে পারতো এখন বর্তমান আধুনিক বিশ্বে সামাজিক মাধ্যম আমাদের সমাজ, অর্থনীতি ও সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রজন্মেও উপর যে প্রভাব ফেলছে তা ভয়াবহ।
সামাজিক মাধ্যমগুলো ধীরে ধীরে আমাদের একটা অসামাজিক প্রজন্মে রূপান্তরিত করছে। এখন আমরা টেলিফোনের কথোপকথনের চেয়ে খুদে বার্তা আদান-প্রদানকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি এবং সরাসরি সাক্ষাতের থেকে অনলাইনে কথা বলাই শ্রেয় মনে করছি। এমনকি অনেকে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়াকে সহজলভ্য প্রচারমাধ্যম, যেমন ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করেছে।
বিজ্ঞানের একটি অসাধারণ অবদান এই ফেসবুক।ফেসবুক হচ্ছে বর্তমান সময়ের সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে অন্যতম মাধ্যম। দৈনন্দিন জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। শুধু এই মাধ্যমটাকে সৎ ও সঠিক পথে ব্যবহার করলে বিতর্ক আসে না।